ইউরোপের আলপিন অঞ্চল বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহতার সাক্ষী হচ্ছে। আশঙ্কাজনক হারে গলে যাচ্ছে এখানকার গ্লেসিয়ারগুলো। বেরিয়ে আসছে বরফের নিচে হাজার বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা মাটি বা পার্মাফ্রস্ট। বরফে ঢেকে থাকা স্থানগুলো বেরিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত, যেখান থেকে ক্ষুদ্র ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বেরিয়ে আসছে। মানব সভ্যতার জন্য যা হয়ে উঠতে পারে বড় হুমকির কারণ। বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে আলপস পর্বতমালার গ্লেসিয়ার। সুইস বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফ গলে মাটি বের হওয়ায় হাজার বছর ধরে মাটি চাপা পড়ে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বেরিয়ে সূর্যালোকে এসে গরমে আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে। সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর ফরেস্ট স্নো অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপ রিসার্চের প্রতিনিধিদল এ অঞ্চলে বরফ নিয়ে গবেষণা করছে। প্রধান বিজ্ঞানী বিট ফ্রেয় প্রথম বিজ্ঞানী যিনি, আলপিনের পার্মাফ্রস্ট আর গ্লেসিয়ারে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজছেন। ফ্রেয় অর তার দল সুইজারল্যান্ডের আলপস পবর্তমালার ওপরে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি তারা ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান করছেন, যেগুলো থাকতে পারে বরফের নিচে। ফ্রেয় জানান, ‘আমরা মনে করেছিলাম বরফের নিচের অংশটা জীবাণুমুক্ত এখন দেখছি বরফের নিচে এমনকি বরফের মধ্যেও জীবাণু আছে।’ তিনি জানান, হাজার হাজার উপকারি আর ক্ষতিকর অনুজীব পেয়েছেন তারা। সুইজারল্যান্ডের বুয়েন্দার আলপসের মরটের্যা শ গ্লেসিয়ারের বরফ গলা পানি নদীতে পড়ে। এটা খুবই বিপজ্জনক। কারণ তারা এখনো নিশ্চিত না যে, এই বরফের পানিতে কি আছে। যা আছে তা কি স্থানীয় মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না। কারণ এই পানি স্থানীয় মানুষ পান করে। ফ্রেয় জানান, ফ্রান্সের একটা দল একই বিষয়ে গবেষণা করছে। তারা পার্মাফ্রস্টে ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ অনেক ভয়াবহ হবে না। কারণ প্রতিলিপি তৈরি করতে তাদের উপযুক্ত স্থান প্রয়োজন। তাই বলে যে এটা বিপজ্জনক হতে পারে না, সেটাও বলা যাচ্ছে না। ফ্রেয় আর তার দলের গবেষণা বলছে, আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথেভাইরাসের উদ্ভব সম্পর্কিত। বাস্তুতত্ত্ববিদ আর মহামারিবিদরা বলছেন, অনেক বেশি মহামারির প্রকোপের সাথে আবহাওয়া পরিবর্তন সম্পর্কিত। বন ধ্বংসের কারণে মানুষের সাথেবন্যপ্রাণীদের সম্পর্কই ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বরফ গলা আর পার্মাফ্রস্ট বেরিয়ে আসতে থাকলে মানুষের জন্য মৃত্যুফাঁদ হতে পারে। ২০১৯ সালে জার্মানির বিজ্ঞানীরা ক্লাইমেটোলজি, জিওলজি আর ভাইরোলজি নিয়ে গবেষণা করে দেখেছে অনুজীব মানুষের জন্য হুমকি। ২০১৬ সালে সার্বিয়াতে রেকর্ড ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফ গলে পার্মাফ্রস্ট বেরিয়ে আসে। ১২ বছর বয়সী একজন মারা যায়, হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় আরও ৯৬ জনকে। কারণ তারা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়, এই ভাইরাস ২৫০০ বছর পুরনো পার্মাফ্রস্ট থেকে বেরিয়ে আসে। সেখানে একটা রেইন ডিয়ার মরে ৭৫ বছর ফ্রিজিং অবস্থায় ছিল। ওই রেইন ডিয়ারের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের ভাইরাস পাওয়া যায়। ফ্রেয়’র দল এখানকার মাউট দ্য বারবা পেইদার পর্বতের পার্মাফ্রস্ট আর বরফ গলা পানিতে অনেক অনুজীবের উপস্থিতি পেয়েছে। ল্যাবে পরীক্ষা করে তারা দেখেছেন কিছু অনুজীব উপকারী, কিছু আবার ক্ষতিকর। কিছু অনুজীব এনজাইম তৈরি করতে পারে, যেগুলো প্লাস্টিক ধ্বংস করতে সক্ষম। কিছু কম তাপমাত্রায় চর্বি ভেদ করতে পারে। পার্মাফ্রস্টে থাকা ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগতে পারে। ফ্রেয় আর তার দলের এটাই স্বার্থকতা যে, অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হতে পারে- আলপসের গ্লেসিয়ারে এমন ব্যাকটেরিয়া পার্মাফ্রস্টে খুঁজে পেয়েছেন তারা। তবে পার্মাফ্রস্টের গলে যাওয়া পৃথিবীর মানুষের জন্য বরাবরের মতো এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন