ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী আফগানিস্তানের ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান এবং আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যমকে অবহিত করে বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ধারাবাহিকভাবে আফগানিস্তান বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। তার ওই নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাকিস্তান সরকার দোহা শান্তি প্রক্রিয়াকে সহজতর করেছে।
আজ ১২ সেপ্টেম্বর হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত উন্নতির ফলে কাবুল তালেবানদের দখলে চলে যায়। এই উন্নয়নের মধ্যে ছিল তৎকালীন আফগান বাহিনীর প্রতিরোধের অনিচ্ছা। এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা ছিল ক্ষমতা ধরে রাখার প্রেক্ষিতে রক্তপাত এড়ানো। আফগানিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক গঠনের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তান আশা করছে যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে। কারণ, ৪০ বছর ধরে তাদের দেশে সংঘাতের কারণে আফগান জনগণ অনেক কষ্ট পেয়েছিল।
হাইকমিশনার আরও বলেন, পাকিস্তান ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে একটি আফগান প্রতিনিধিদলের বৈঠক আয়োজন করেছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাখদুম শাহ মাহমুদ কুরেশি তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ইরান সফর করেন, যেখানে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা হয়। আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি এবং সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবস্থানের আরও সমন্বয়ের বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি, শরণার্থীদের আগমনের সম্ভাবনা, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর দ্বারা আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার প্রতিরোধ, মাদক ব্যবসা এবং কোভিড -১৯ মহামারী সংকট থেকে উত্তরণ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ২০২১ সালের 8 সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের প্রতিবেশীদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। বৈঠক সমাপ্তির পর জারি করা বিবৃতিতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। টেকসই আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার গুরুত্ব নিশ্চিত করেন। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে আফগানিস্তানে পা রাখার অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে পুনরাবৃত্তি করেন। বৈঠকে আফগানিস্তানকে পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয় এবং পরামর্শ চালিয়ে যেতে সবাই সম্মত হন।
এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার কাবুল দখলের পর আফগানিস্তান থেকে উচ্ছেদ প্রচেষ্টায় পাকিস্তানের সক্রিয় ভূমিকার বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত পাকিস্তান প্রায় ৩০টি দেশের ১২,০০০ এরও বেশি লোককে সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। অন্যান্যদের মধ্যে কূটনৈতিক কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরাও ছিলেন। তিনি আরও জানান, পাকিস্তান এমন পরিবেশ তৈরির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে, যা আফগানিস্তানের অভিবাসীদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সহ সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তান ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ৮০,০০০ পাকিস্তানি নিহত এবং আরো হাজার হাজার আহত হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে আনুমানিক ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১০০ টিরও বেশি সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা আফগান ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত অন্য একটি শত্রু দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে হয়েছিল।
আফগানিস্তানকে কেনো পাকিস্তানের পছন্দের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তান ইতিবাচকভাবে সব আফগান এবং প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। পাকিস্তান এটা জোর দিয়ে আসছে যে, আফগানিস্তানের সকল নাগরিকদের অধিকারের প্রতি দেশটি সম্পূর্ণভাবে সম্মান জানায় এবং মনে করে তা সকলের দ্বারা সুরক্ষিত হওয়া উচিত। উপরন্তু, পাকিস্তান আফগানিস্তানে গঠিত সরকারকে সমর্থন করে।
হাইকমিশনার আরও বলেন, আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কটের দিকে লক্ষ রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন, যা লক্ষ লক্ষ আফগান জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি লিওনের একটি বিবৃতি উল্লেখ করে হাইকমিশনার আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি রোধে আফগানিস্তান সরকারকে তার আর্থিক সম্পদে ব্যবহারে অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন, যা না হলে বিদ্যমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন