শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার টিকা অনুমোদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ৯:৩২ এএম

মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে প্রথমবারের মতো কোনো টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল বুধবার (৬ অক্টোবর) সংস্থাটি এই টিকার অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।

জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৪ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে এই রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা এতদিন ছিল না। অবশেষে আশার আলো হয়ে এসেছে একটি টিকা।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘানা, কেনিয়া ও মালাবিতে ২০১৯ সাল থেকে পরিচালিত একটি পাইলট কর্মসূচির ফলাফলের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচও এ সিদ্ধান্ত নেয়। কর্মসূচির আওতায় আফ্রিকার ওই তিন দেশে ২০ লাখের বেশি ডোজ ম্যালেরিয়ার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। টিকাটি ১৯৮৭ সালে প্রথম উদ্ভাবন করে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জিএসকে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, আফ্রিকার ওই তিন দেশে পাইলট কর্মসূচির অংশ হিসেবে টিকা প্রয়োগের পর প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিশ্বের প্রথম ম্যালেরিয়া টিকার অনুমোদন দেওয়া হবে। পরবর্তিতে ব্যাপক পরিসরে এই প্রয়োগের সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বহু প্রতীক্ষিত ম্যালেরিয়ার টিকা বিজ্ঞানের জন্য একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। আমরা বেশ গর্ববোধ করছি।

ডব্লিউএইচও বলেছে, সাব-সাহারা আফ্রিকার মত যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়ার মাঝারি থেকে উচ্চ প্রকোপ দেখা যায়, সেখানে এই টিকা প্রয়োগ করা উচিত।
বিশ্ব সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, “শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকার প্রতীক্ষা বহু দিনের। বিজ্ঞান, শিশু স্বাস্থ্য ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এটা যুগান্তকারী ঘটনা। এই টিকা প্রতিবছর লাখো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।”

ম্যালেরিয়ার মূলে রয়েছে প্লাজমোডিয়াম গোত্রের পরজীবী। আর এ রোগ মানুষের শরীরের পৌঁছায় স্ত্রী-অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে।
অনুমোদন পাওয়া 'আরটিএসএস' টিকা শিশুদের শরীরে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে।

যে পাঁচটি প্রজাতির প্লাজমোডিয়ামের কারণে ম্যালেরিয়া হয়, তারমধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম সবচেয়ে প্রাণঘাতী এবং আফ্রিকায় এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।

এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের তৈরি করা আরটিএস,এস নামের এই টিকা কেবল ম্যালেরিয়া নয়, যে কোনো পরজীবীঘটিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষের তৈরি করা প্রথম কার্যকর টিকা।

২০১৫ সালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা যায়, এ টিকা প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
আক্রান্ত হলেও প্রতি দশজনে তিনজনের গুরুতর অসুস্থ হওয়া রোধ করে। আর আক্রান্ত হলে শিশুদের দেহে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তা এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনে।

তবে কার্যকর সুরক্ষা পেতে এ টিকার চারটি ডোজ নিতে হয়। শিশুর বয়স পাঁচ মাস মাস হলে এক মাস অন্তর প্রথম তিনটি ডোজ দিতে হয়।আর চতুর্থ বুস্টার ডোজটি দিতে হবে ১৮ মাস বয়স হলে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় বিশ্বের প্রায় ২৩ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে চার লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।এসব মৃত্যুর ৯৫ শতাংশই ঘটে আফ্রিকান দেশ গুলোতে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ তুলমামূলকভাবে কম থাকলেও, পাহাড়ি অঞ্চলে এখনও এর ভয়াবহতা রয়েছে।

একশ বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর ম্যালেরিয়ার একটি কার্যকর টিকা তৈরির বিষয়টি চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য বড় এক অর্জন। সূত্র: বিবিসি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন