ইনকিলাব ডেস্ক : চীন, ইরান ও প্রতিবেশী মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে নতুন একটি অর্থনৈতিক জোট গড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্কে ভারতের প্রভাবের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নতুন এ জোট গড়ার চিন্তাভাবনা করছে দেশটি। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে গত বুধবার এ তথ্য জানায়। পাকিস্তান মনে করে, সার্ক থেকে ভারতই বেশি লাভবান হচ্ছে। এই জোটের বৃহৎ সদস্য হওয়ায় এর ওপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছে ভারত। সম্প্রতি কাশ্মীরের উরিতে সেনা ঘাঁটিতে হামলার পর ভারতের বিরোধিতার মুখে ইসলামাবাদে আগামী ১৫ ও ১৬ নভেম্বরের ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। এর ফলে আঞ্চলিক এই জোটের ভবিষ্যত এখন অনেকটাই শঙ্কার মুখে রয়েছে বলে মনে করা হয়। এ কারণেই পাকিস্তান নতুন এ জোট গঠনের চিন্তাভাবনা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বরের উরি সেনা ঘাঁটিতে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে ভারত। তবে পাকিস্তান সবধরনের অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। ভারত সার্কে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করার পর তাকে অনুসরণ করে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ভুটানও সম্মেলন বয়কট করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরকালে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল এ পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করে। খুব শিগগরই তা আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশাবাদী তারা। সিনেট সদস্য মুশাহিদ হুসাইন সাইদ এব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেছেন, ইতোমধ্যেই বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ার জোটের প্রকাশ ঘটেছে। বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে চীন, ইরান এবং প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ। তিনি বলেন, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতর দিয়ে চীন-পাকিস্তান যে অর্থনৈতিক করিডোরটি বিদ্যমান সেটি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক সংযোগ সড়ক। গোয়াদর বন্দরটি কেবল চীনের সবচেয়ে কাছেই নয়, বরং ভূমিবেষ্টিত মধ্য এশিয়ারও অনেক সন্নিকটবর্তী। হুসাইন সাইদ আরো বলেন, আমরা চাই এই জোটে ভারত যেন অংশ নেয়। তবে ভারত হয়তো এই প্রস্তাবকে পছন্দ করবে না। কারণ, সার্কের কাছ থেকে যে সুবিধা তারা পাচ্ছে তাতে তারা সন্তুষ্ট।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে তা আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জাতিসংঘসহ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশে^র বিভিন্ন দেশ। পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এবং স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের পক্ষে কথা বলছে। ভারত এ বিষয়গুলো মেনে নিতে পারছে না। তারা মনে করছে, সার্কে তাদের প্রধান মিত্র আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ভুটানের মতো পাকিস্তানকেও তারা প্রভাবিত করতে পারবে। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভুল।
সার্ক সদস্যরাষ্ট্র মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাথে পাকিস্তানের ভালো সম্পর্ক থাকলেও তারা ভারতকে মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট নয়। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান মনে করে, সার্ক সবসময় ভারতের দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকবে। তাই কোনো জোটে কারো প্রভাব ব্যাপক হয়ে উঠলে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। আর এ কারণেই পাকিস্তান বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় জোট গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাকিস্তানের এ উদ্যোগে চীন যে দ্রুত সাড়া দিয়েছে, তার কারণ হচ্ছে, এ অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব চীনও মেনে নিতে পারছে না। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, সে যেন মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রসমূহ ও ইরানকে এ নতুন জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে প্রভাব বিস্তার করে। ডন, ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন