নানামুখী চাপ আর গৃহবিবাদে জর্জরিত ট্রাম্পের বিষোদ্গার
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে রিবাপলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তৃতায় এখন ঘৃণা ছড়ানো আর আক্রমণাত্মক কথা ছাড়া আর কিছু থাকে না। ওয়েস্ট পাম বিচে গত বৃহস্পতিবার তিনি যে বক্তব্যটি রেখেছেন তা নিয়ে মিডিয়াগুলো এ কথাই বলছে। ওই বক্তৃতায় তিনি ক্লিনটনদের (বিল ও হিলারি) ক্রিমিনাল বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প বলেন, এই যে লড়াই তা জাতির টিকে থাকার জন্য। বিশ্বাস করুন ৮ নভেম্বর আমাদের জাতিকে রক্ষা করার শেষ সুযোগটি আসছে। এটা মনে রাখবেন। এই নির্বাচনই প্রমাণ করবে আমরা কি একটি জাতি না স্রেফ একটি গণতন্ত্র। কিন্তু বেশ কিছু বৈশ্বিক স্বার্থ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা ভোট প্রক্রিয়ায় কারচুপি করবে, আমাদের পদ্ধতিতেই কারচুপি ঢুকে পড়েছে। এটাই বাস্তবতা। আপনার তা জানেন, তারাও তা জানে, আমিও তাই জানি, আর সত্যি কথা বলতে গোটা বিশ্বও তাই জানে। এই সব শক্তি আর তাদের প্রতিবেশী মিডিয়া এই জাতির ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে তা সবারই ভালো করে জানা। আর যারাই তাদের সেসব কাজের চ্যালেঞ্জ করতে যাবে তারাই হবে যৌনবাদী, ধর্ষকামী আর বিদেশিদের নিয়ে ভিতু আর নৈতিকতাবোধ বিবর্জিত। তখন তারা আপনাকে আক্রমণ করবে। অপবাদ দেবে। তারা আপনার ক্যারিয়ার ও পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে চাইবে। তারা আপনার সুনাম সহ সব কিছুকেই তছনছ করে দিতে চাইবে। তারা মিথ্যাচার করে যাবে। মিথ্যা মিথ্যা আর মিথ্যাই বলে যাবে। আর অতঃপর তারা এর চেয়ে ক্ষতির পায়তারা করবে। মনে রাখবেন, ক্লিনটনরা ক্রিমিনাল। তারা সবাই ক্রিমিনাল। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন এসব বলছিলেন তখন তার ভক্ত সমর্থকরা চিৎকার করে বলতে থাকে, তাকে জেলে দাও। ট্রাম্প আরও বলেন, তাদের অপরাধ ভালোভাবেই নথিভুক্ত। আর যেসব শক্তি তাদের রক্ষা করতে চায় তারা পররাষ্ট্র দফতরে হিলারি যেসব অপরাধ করেছেন সেগুলো ঢাকা দিতে চেষ্টা করবে। পররাষ্ট্র দফতর ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের এমন সব কাজ আমরা ইতিহাসে আর কখনোই দেখিনি। অপর এক খবরে বলা হয়, রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে সমর্থন না করার বিষয়ে নিজ দলের নেতা পল রায়ানের সিদ্ধান্ত তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। গত বুধবার এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি রায়ানকে এক শয়তানি চক্রান্তের অংশ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে তার সমর্থনের কোনো প্রয়োজন তিনি দেখেন না। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় বিতর্কে তাঁর চমৎকার ফলাফলের পর স্পিকার রায়ানের উচিত ছিল তাঁকে অভিনন্দন জানানো। কিন্তু তা করেননি, কারণ তিনি আসলে এক শয়তানি চক্রান্তের অংশ। ট্রাম্প ইঙ্গিত করেন, তিনি চান না রায়ান পরবর্তী কংগ্রেসে স্পিকার হোন। গত শুক্রবার নারীদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর নিজ দলের ভেতরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে ধস নেমেছে। রিপাবলিকান দলের ভেতরে প্রায় দেড়শ নেতা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের নিন্দা করেছেন। তাঁদের অন্যতম দলের নেতা স্পিকার পল রায়ান। তিনি ট্রাম্পের পক্ষ সমর্থন করে কোনো প্রচারণায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারিকে ব্ল্যাংক চেক দেওয়া ঠেকাতে রায়ান কংগ্রেসের উভয় কক্ষ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগের কথা বলেছেন। ট্রাম্প ও রায়ানের এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব রিপাবলিকান দলকে এক অভাবিত গৃহবিবাদে ফেলে দিয়েছে। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে একমত যে, দলের শীর্ষ নেতাদের সমর্থন ও সাংগঠনিক সহায়তা ছাড়া ট্রাম্পের পক্ষে জেতা অসম্ভব। মাঠপর্যায়ে তাঁর কোনো সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেই। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রতি বিরোধিতার মনোভাবের কারণে তাঁর একনি সমর্থকেরা সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট না-ও দিতে পারে। এর ফলে যে উদ্বেগ থেকে রায়ান ট্রাম্পের ছায়া এড়াতে চাইছেন, সেই অপছায়াই দলের ওপর ভর করতে পারে। এই ভয় এড়াতে পুনর্র্নিবাচনে বিপদে আছেন এমন রিপাবলিকানরা ফের ট্রাম্পের প্রতি তাঁদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন