বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে আরো এক লাশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৩৮ পিএম

পোলিশ পুলিশ শনিবার জানিয়েছে যে বেলারুশ সীমান্তের কাছে একটি জঙ্গলে সিরিয়ার এক যুবকের মরদেহ পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ব সীমান্তে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সবশেষ শিকার তিনি।

এর মধ্যে দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের নিয়ে ক্রমবর্ধমান অচলাবস্থার মধ্যে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে এ নিয়ে অন্তত নয় জনের মৃত্যু ঘটলো। এদিকে, রাশিয়ার 'আশা' দ্বন্দ্ব নিরসনে বেলারুশের সঙ্গে কথা বলবে জার্মানি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মরদেহ একদিন আগে ওলকা তেরেচওস্কা গ্রামের কাছে পাওয়া গিয়েছিল। মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলারুশ-ইইউ সীমান্তে ১৪ বছর বয়সি একটি কুর্দি বালক হাইপোথার্মিয়ায় মারা যায়। এই দুই মৃত্যুর ফলে পোলিশ সীমান্তে আটকা পড়ে অভিবাসীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো অন্তত নয়জনে। ইইউ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ বেলারুশ সরকারই কয়েক মাস ধরে ইইউভুক্ত রাষ্ট্র পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়ার সীমান্তে অভিবাসীদের ঠেলে দিচ্ছে।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদক মেরিনা স্ট্রস জানিয়েছেন, সীমান্তের কাছের এলাকাটি ‘‘বিশাল বনের মতো... সেখানে জলাভূমি আছে, নেকড়ের মতো বন্য প্রাণী আছে। এই অঞ্চলে, বিশেষ করে রাতে, হিমশীতল ঠান্ডা। ফলে যারা সেখানে পথ খোঁজার চেষ্টা করছে তাদের পরিস্থিতি কেমন তা সহজেই কল্পনা করা যায়।'' স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট স্ট্রসকে জানিয়েছেন যে আগের রাতেই তারা শিশুসহ ১০ জনকে 'খুব খারাপ অবস্থায়' দেখতে পেয়েছেন।

২০২০ সালের বিতর্কিত নির্বাচন এবং প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকারের ভিন্নমতের বিরুদ্ধে সহিংস দমন-পীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ বেশ কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। ইউরোপের বেশ কিছু রাষ্ট্রই অভিযোগ করেছে, এর প্রতিশোধ নিতেই অভিবাসীদের ‘অস্ত্র' হিসাবে ব্যবহার করছে বেলারুশ।

পোলিশ সীমান্তে তিন থেকে চার হাজার অভিবাসী সব সময়ই অবস্থান করছেন। কিন্তু অনেক অভিবাসী বেলারুশের মধ্য দিয়ে সহজে ইউরোপে আসার উপায় দেখতে পেয়ে আরো দলে দলে পোল্যান্ড সীমান্তে জড়ো হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ নতুন অভিবাসন রুট বন্ধে সীমান্তে শক্তি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মনে করেন, উত্তেজনা নিরসনে ইউরোপীয় নেতাদের লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে কথা বলা দরকার। শনিবার সম্প্রচারিত একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘‘আমি যা বুঝতে পেরেছি, আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং (জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা) ম্যার্কেল একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।'' “আমি আশা করি এটা অদূর ভবিষ্যতে ঘটবে - এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।'' তবে পুতিন অভিবাসী সংকটের জন্য আবারও পশ্চিমকেই দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা নীতির কারণেই অভিবাসীরা ইউরোপে যেতে চাচ্ছে।'' তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় অভিবাসীদের এই সংকট কোথা থেকে এসেছে। বেলারুশ কি এই সমস্যার কারণ? নাকি অন্য কিছু? না, এই পরিস্থিতি ইউরোপীয় দেশগুলোসহ পশ্চিমা দেশগুলো নিজেরাই তৈরি করেছে। এই সংকট রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক।''

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার বেলারুশ-পোলিশ সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হোয়াইট হাউসে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা রাশিয়াকে জানিয়েছি, আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা বেলারুশকেও জানিয়েছি।''

মস্কো লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন দিয়ে আসছে, কিন্তু বর্তমান সংকটে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। ২০১৫ সালে ১০ লাখেরও বেশি অভিবাসী ইইউতে আশ্রয়ের আবেদন করেছিল। সেই সংকটের পুনরাবৃত্তি এড়াতে চায় ইইউ। ব্রাসেলস এখন লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপের কথা ভাবছে।

তুরস্ক ২০১৫ সালের সংকটের পর সব মিলিয়ে এক লাখের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। শুক্রবার ইরাকি, সিরিয়ান এবং ইয়েমেনিদের বেলারুশগামী ফ্লাইটে ওঠার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তুরস্ক। ইইউ কর্মকর্তারা তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সূত্র: এপি, ডিপিএ, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন