শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সংক্রমণের অজুহাতে বছর ধরে লাশ মর্গে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা বলে পরিবারের কাছে দেওয়া হয়নি লাশ। গত বছরের ২ জুলাই ভারতের বেঙ্গালুরুর রাজাজিনগরের ইএসআই হাসপাতালে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল দুজনের। পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিবারকে জানানো হয়েছিল, তাদের স্বজনদের লাশ সৎকার করে দেওয়া হয়েছে। অথচ এক বছর ধরে হাসপাতালের মর্গে পড়ে রইল দুর্গা সুমিত্রা (৪০) ও মুনিরাজুর (৫০) লাশ। স¤প্রতি দুজনের পরিবার জানতে পেরেছে, সৎকার করা হয়নি লাশগুলোর। মর্গেই পড়ে আছে এক বছর ধরে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভার ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। দুর্গার বোন সুজাতা জানিয়েছেন, দিদি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বহু জায়গায় সেই সময় আমরা বেড খুঁজেছি। শেষ পর্যন্ত ইএসআইতে বেড পাই। তবে ভর্তির চার দিন পর দিদির মৃত্যু হয়েছিল। তারা আমাদের হাতে লাশ দেয়নি। আমরা বাড়ি ফিরে আসি। এরপর বেঙ্গালুরু পৌরসভা থেকে ফোনে জানানো হয়েছিল তারা দেহ সৎকার করে দিয়েছে। কিন্তু তিন দিন আগে ফোন পেয়ে বুঝতে পারেন সত্য-মিথ্যা। এদিকে পুরো ঘটনায় বেঙ্গালুরুর বিজেপি বিধায়ক সুরেশ কুমার তদন্তের দাবি তুলেছেন। খবরে বলা হয়, ব্যাঙ্গালুরুর নাগরিক পরিষদ ব্রুহাত ব্যাঙ্গালুরু মহানগর পালিকে (বিবিএমপি) ওই হাসপাতালটির বেড পরিস্থিতির তদারকির দায়িত্বে ছিল। মানুষ যাতে ভর্তি হতে পারেন এ জন্য বেসরকারি স্থাপনায় বেডের ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণেও ছিল তারা। কিন্তু ওই দুই মৃতের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, নাগরিক পরিষদ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউই সংক্রমণ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তাদের স্বজনের লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। তারা জানিয়েছিল, মৃতদেহের সৎকার হয়ে গেছে। এর এক বছর পরে রু² এক বেদনা সবাইকে বর্শার মতো বিদ্ধ করছে। বলা হয়েছে, তাদের প্রিয়জনদের মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে পচছে। মর্গের স্টাফরা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করার পর তা জানানো হয় পরিবারের সদস্যদের। এমন অবহেলার জন্য এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোষানলে পড়েছে। কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরের আগে সব আইনগত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। মৃত দুর্গার বোন সুজাতা বলেছেন, গত বছর হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে তারা ইএসআই হাসপাতালে বেড পান। তার ভাষায়, দুর্গা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। ওই হাসপাতালে নেয়ার ৪ দিন পরে মারা যান দুর্গা। যেহেতু তিনি করোনায় মারা গেছেন, তাই র্কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তরে রাজি হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা ঘরে ফিরে আসি। এর কয়েকদিন পরে বিবিএমপি থেকে একটি ফোনকল পাই। আমাদেরকে বলা হয়, দুর্গার লাশ দাহ করা হয়েছে। তারপর এখন ১৫ মাস হতে চলল, তিনদিন আগে আমরা একটি কল পেলাম। সেই ফোন ধরতেই হাত-পা ঠাÐা হয়ে গেল। তারা যা বললেন বুঝতে পারলাম না সত্য নাকি মিথ্যা খবর দিচ্ছেন। ওদিকে মুনিরাজুর ছেলে সতীশও একই রকম অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে গত বছর ফোন করে আমাদের বলা হলো বাবা আর নেই। আমরা তাদের কাছে লাশ ফেরত চাইলাম। কিন্তু বিবিএমপি কর্তৃপক্ষ আমাদের বললো যে, লাশ দাহ করা হয়েছে। আমরা মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করতে গেলাম। তারা আবারও সেই একই কথা বললেন। এ বিষয়ক ঘোষণায় আমাদেরকে স্বাক্ষর করতে বলা হলো। কর্নাটকের শ্রমমন্ত্রী এ. শিবরাম হেব্বারকে বিষয়টি নিয়ে চিঠি লেখেন রাজাজিনগরের বিজেপি দলীয় এমডবষ্ঠাএ সুরেশ কুমার। তাতে শিবরাম হেব্বারকে তিনি অনুরোধ করেন বিষয়টি কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীর নজরে তুলে ধরতে। সুরেশ কুমার ওই চিঠিটি মিডিয়ার সঙ্গে শেয়ার করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, বিএমএমপি এবং ইএসআই কর্তৃপক্ষের ভ‚মিকা ভয়াবহ। এর প্রেক্ষিতে আপনাকে অনুরোধ করবো একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিতে, এ বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট দিতে এবং এই অমানবিক কর্মকান্ডের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে। হিন্দুস্তান টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন