সোমবার সন্ধ্যায় জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রজাতন্ত্রের জন্ম উদযাপন করেছে বার্বাডোস। এ মধ্য দিয়ে তারা প্রায় ৪০০ বছর পর ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সাথে তার শেষ অবশিষ্ট বন্ধন ছিন্ন করেছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন রাষ্ট্রের সাবেক প্রধান, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের পুত্র প্রিন্স চার্লস। সেখানে তিনি ‘দাসত্বের ভয়ঙ্কর নৃশংসতা’র কথা স্বীকার করেছেন।
দ্বীপ দেশটির রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রে ঐতিহাসিক রূপান্তরকে চিহ্নিত করার আনুষ্ঠানিক উৎসবের জন্য রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ন্যাশনাল হিরোস স্কোয়ারকে জাতীয় রঙ সোনালী ও মেরুনে সজ্জিত করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস এ অনুষ্ঠানের জন্য লন্ডন থেকে এসেছিলেন এবং রাজকীয় পতাকাটি নামানো এবং তার জায়গায় দেশটির নতুন পতাকা উত্তোলনের সাক্ষী থাকেন। বার্বাডোস ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার ঠিক ৫৫ বছর পর এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। ঐতিহাসিক মুহ‚র্তটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২১ বার গোলাবর্ষনের পরে ম্যাসন প্রিন্স অফ ওয়েলসকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান, অর্ডার অফ ফ্রিডম প্রদান করেন। যা ছিল বার্বাডোস এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অব্যাহত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে তুলে ধরার জন্য একটি পদক্ষেপ।
এর পরে, রানীর নিজের সাবেক প্রতিনিধি, গভর্নর-জেনারেল ও সাবেক আইনজ্ঞ ৭৩ বছর বয়সী স্যান্ড্রা ম্যাসন প্রধান বিচারপতির দ্বারা প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আমরা একজন নারীকে সর্বসম্মতভাবে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছি। এ মুহূর্তে তার থেকে যোগ্য কোনো প্রার্থী পাওয়া সম্ভব নয়।’ ম্যাসন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম ভাষণে বলেন, ‘আমরা কে, এবং আমরা কী অর্জন করতে পারি, ২০২১ সালে, আমরা এখন নতুন প্রজাতন্ত্রের দিকে আমাদের জাহাজের ধনুক ঘুরিয়ে দিই। আমরা এটি করি যাতে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বের সম্প‚র্ণ উপাদান দখল করতে পারি। দশক ধরে, আমরা বার্বাডোসের প্রজাতন্ত্রে রূপান্তর নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক করেছি। আজ, বিতর্ক এবং বক্তৃতা কর্মে পরিণত হয়েছে। আজ, আমরা আমাদের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশ করেছি।’
অনুষ্ঠানে প্রিন্স চার্লস বলেন, ‘এই প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি একটি নতুন সূচনা দেয়। আমাদের অতীতের অন্ধকার দিনগুলো এবং দাসত্বের ভয়ঙ্কর নৃশংসতা থেকে, যা আমাদের ইতিহাসকে চিরকাল কলঙ্কিত করে রেখেছে। এই দ্বীপের লোকেরা অসাধারণ দৃঢ়তার সাথে তাদের পথ তৈরি করেছিল। মুক্তি, স্ব-শাসন এবং স্বাধীনতা ছিল আপনাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং আত্ম-সংকল্প আপনাদের পথপ্রদর্শক হয়েছে।’ প্রাণবন্ত উদযাপন অনুষ্ঠানে বার্বাডিয়ান সঙ্গীত এবং নৃত্যও প্রদর্শন করা হয়। তবে অনেকের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল যখন গায়িকা রিহানাকে জাতীয় নায়ক ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণায় জনতার বিশাল গর্জন করে আনন্দ প্রকাশ করে।
এর আগে মরিশাস ১৯৯২ সালে রানী এলিজাবেথকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় এবং নিজেদের প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করে। বার্বাডোস প্রজাতন্ত্র হলেও কমনওয়েলথ গোষ্ঠীভুক্ত দেশের মধ্যে থাকছে। মোট ৫৪টি দেশ এই গোষ্ঠীর সদস্য। প্রায় চারশ বছর আগে ব্রিটিশ জাহাজ প্রথমে বার্বাডোস পৌঁছায়। তারপর ব্রিটিশরা বার্বাডোসকে সুগার কলোনিতে পরিণত করে। আফ্রিকা থেকে মানুষকে জোর করে ধরে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় চাষ করার জন্য। এখন দেশের অধিকাংশ মানুষেরই মূল আফ্রিকায়। একসময় বার্বাডোসকে ‘লিটল ইংল্যান্ড’ বলা হতো। দীর্ঘদিন ধরে এখানে বিতর্ক চলছিল, ব্রিজটাউনে ন্যাশনাল হিরোস স্কোয়ারে ব্রিটিশ অ্যাডমিরালের মূর্তি রাখা হবে না সরিয়ে দেয়া হবে, তা নিয়ে। দুইশ বছর ধরে মূর্তিটি সেখানে আছে। সূত্র : এপি, সিএনএন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন