শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভোটের আগে বিশ্বনাথ মন্দির করিডোর উদ্বোধন মোদির

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৩৭ পিএম

উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডোরের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি।

পরনে গেরুয়া পোশাক। হাতে একটা ঘট এবং তাতে রাখা কয়েকটা ফুল। সাজিতে ফুলের পাপড়ি। বারাণসীর ললিতা ঘাটে ধীর পায়ে গঙ্গায় নেমে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার বেলা বারোটা নাগাদ। ধাপে ধাপে তিনি নেমে গেলেন কোমর পানিতে। তারপর শুরু হলো পুজো। ফুল, পাপড়ি ছড়িয়ে দিলেন গঙ্গায়। তারপর গলা থেকে খুললেন রুদ্রাক্ষের মালা। জপ করলেন। তিনবার ডুব দিলেন। পানির মধ্যেই বেশ কয়েকবার প্রদক্ষিণ চললো। তারপর ধীরে ধীরে উঠে এলেন। পোশাক বদল করে সোজা বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে। পুজো চললো বেশ কিছুক্ষণ ধরে।

এরপর মোদি উদ্বোধন করলেন কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের। টিভি চ্যানেলের কল্যাণে তা লাইভ পৌঁছাল দেশের সর্বত্র। গঙ্গার উপর ললিতা ঘাট থেকে সোজা করিডোর চলে গেছে বিশ্বনাথ মন্দির পর্যন্ত। পাঁচ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নতুনভাবে সজ্জিত মন্দির পরিসর। আগে গলির গলি তস্য গলি দিয়ে যেতে হতো মন্দিরে। সেই মন্দির পরিসর ছিল মাত্র তিন হাজার বর্গফুট। সেটা নতুন করিডরের পর পাঁচ লাখ বর্গফুটের হয়ে গেল। কিন্তু তার জন্য আশপাশের সব বাড়ি ভেঙে ফেলতে হয়েছে।

মানুষ প্রথমে প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রথমে তারা যেতে চাননি। কিন্তু প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট এক হাজার ৪০০ দোকানদার, বাড়ির মালিক, ভাড়াটে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তারপর ভেঙে ফেলা হয়েছে সেই গলি। তা নিয়ে জোরদার বিতর্কও হয়েছে। কিন্তু কাজ চলেছে। এমনকী করোনাকালেও কাজ বন্ধ হয়নি।

এই পাঁচ লাখ বর্গফুট এলাকায় ভোগশালা, পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র, বৈদিক কেন্দ্র, মুমুক্ষু ভবন, যাত্রী সুবিধা কেন্দ্র, মিউজিয়াম, দর্শন গ্যালারি, ফুড কোর্ট সহ ২৩টি ভবন তৈরি হয়েছে। মোদির দাবি, বয়স্ক, বিকলাঙ্গদের আগে মন্দিরে আসতে অসুবিধা হতো। এখন সকলে সহজে আসতে পারবেন। নৌকা করে জেটিতে। সেখানে এসকেলেটার করে ঘাটে। তারপর সোজা মন্দিরে আসতে পারবেন দর্শনার্থীরা। মোদির দাবি, নতুন করিডোর হওয়ার পর অতীত কীভাবে ভবিষ্যৎকে দিশা দিচ্ছে, তার দর্শন হবে এখানে।

লোকমত সংবাদপত্রের রাজনৈতিক সম্পাদক এবং উত্তরপ্রদেশ বিশেষজ্ঞ শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''যেভাবে বারাণসীতে বিশ্বনাথ মন্দির করিডোরের উদ্বোধন হয়েছে, তার প্রভাব ভোটে পড়তেই পারে। উত্তরপ্রদেশের ভোটে দুইটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, জাতপাতের অঙ্ক, দুই সাম্প্রদায়িক সমীকরণ। বিজেপি যে গতবার উত্তরপ্রদেশে রেকর্ড আসন নিয়ে জিতেছে, তার পিছনে এই দুইটি বিষয়ের প্রভূত অবদান আছে।'' শরদের মতে, '' অযোধ্যয় রামমন্দির তৈরি এবং বারাণসীতে বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডোর দেখিয়ে ভোট টানতে চাইছে বিজেপি। সেই প্রয়াস এদিনের অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে পরিস্কার।''

প্রবীণ সংবাদিক সুনীল চাওকের মতে, ''এর প্রভাব ভোটে কতটা পড়বে, তা এখনই বলা মুশকিল। যেভাবে তড়িঘড়ি করে করিডোরের উদ্বোধন করা হলো, তাতে বোঝা যাচ্ছে, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হচ্ছে, এটা ভোটে জেতার জন্য যথেষ্ট নয়।'' সুনীল মনে করেন, ''ভোটের আগে কোন বিষয় বড় হয়ে দেখা দেবে, কৃষকদের ক্ষোভ, কর্মসংস্থান না থাকা, জিনিসের দাম বাড়ার মতো বিষয়গুলি প্রাধান্য পাবে কি না, তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।''

শরদ বলছেন, ''আওরঙ্গজেব, সুলতানী আমলের কথা বলা, বক্তৃতায় মাঝেমধ্যে ভোজপুরীতে বলা শুরু করে দেয়া থেকে পোশাক, করিডোর, সবকিছুই ছিল প্রতীকী। বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছেন মোদি। হিন্দুত্বের বার্তা।'' চাওকে বলছেন, ''কয়েক মাস আগে এই গঙ্গা দিয়েই সারি সারি লাশ ভেসে এসেছে। করোনায় আক্রান্তদের লাশ। একথা ঠিক, মানুষের স্মৃতি বেশিদিন থাকে না। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না, কী হবে।'' সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন