শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতি

বিজয় দিবসের ৫০তম বার্ষিকীতে স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিনীকে মুক্ত করাই হোক আমাদের শপথ

মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:১৭ পিএম

স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া। আপোশহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণ।

১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক বাহিনীর কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাৎবরণ করার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বাবানে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলতঃ বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনের দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচী শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাঁধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙ্গে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া এরশাদ হটাও এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙ্গে দেন। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেনে। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন। দিন-মাস ও বছরের হিসাব পেরিয়ে কারাবন্দি জীবনের সাড়ে তিনবছর পার করেছেন। এবারই প্রথম নয় খালেদা জিয়ার কারাজীবন। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর তিনি মোট চারবার গ্রেফতার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিনি গ্রেফতার হন। তবে তখন তাকে বেশি দিন বন্দি থাকতে হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে এক বছরেরও (৩৭২ দিন) বেশি সময় বন্দি ছিলেন তিনি।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বেগম জিয়াকে এক কাপড়ে তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছাড়তে বাধ্য করে আওয়ামী লীগ সরকার। বলতে গেলে বলপ্রয়োগ করেই তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৫ সালে প্রায় তিনমাস তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বর্তমান সরকার অবরুদ্ধ করে রাখে। নিরাপত্তার কথা বলে তালা মেরে দেওয়া হয় তার অফিসের গেটে। তার চলাফেরার পথ বন্ধ করার জন্য বাসার সামনে রাখা হয়েছে বালুর ট্রাক। সংঘাত এড়াতে ‘সরকারি’ অবরোধের কবলে পড়ে দেশ ও রাজধানী ঢাকা।
আমরা এর আগেও কয়েকবার এ রকমটি দেখেছি। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঠেকাতে দুই দিন আগে থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলো আটকে দেয়া হয়েছিল। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসেও আরো একবার একই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ। দেশজুড়ে সড়ক, নৌ ও রেলপথের যাতে বিরোধী দলের সমর্থকরা ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সেসবের চলাচল।
বিরোধী দল সমাবেশের ডাক দেবে আর সরকার সব বন্ধ করে দেবে, এটা কোনো সুস্থ রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না। বিরোধী দলের জমায়েত মোকাবিলায় এমন পদক্ষেপে সরকার তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক ফায়দা পাচ্ছে বটে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি, একচেটিয়া ক্ষমতা ব্যবহারের দুর্নামের ভাগিদার হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার দলটি। জনমনে গড়ে উঠছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি।
কয়েক বছর ধরে আমরা বিরোধী দলের মোকাবিলায় সরকারকে অনৈতিক জবরদস্তির আশ্রয় নিতে দেখছি। বিরোধী নেত্রীকে বাসায় আটকে রাখা, সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, কর্মসূচি ঘোষণাকারী নেতাদের গ্রেফতার করা, নেতাকর্মীদের নামে ডজন-ডজন মামলা দিয়ে হয়রানি করা নৈমিত্তিক বিষয় করে তুলেছে সরকার।
আমরা মনে করি, সরকারের এসব আচরণ কোনোভাবেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিবাচক রাজনৈতিক প্রত্যয়ের মধ্যে পড়ে না। বরং তাতে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা আর এর পরিণামের পরোয়া না করার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
একটি কথা না বললেই না, ক্ষমতা নানুষকে অন্ধ করে দেয়, ইদানিং আওয়ামী লীগ নেতেদের কথা শুনলে এমনটাই মনে হয়, যে আওয়ামী লীগ জনগনের গণতন্ত্রের কথা বলে, মানুষের ভোটাধীকারের কথা বলে বারবার বাংলাদেশের মানুষের সাথে বেঈমানী করেছে, বারবার বাংলাদেশের গনতন্ত্র আওয়ামী লীগ নামধারী ঐ হায়েনাদের ধারা ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে কখনো গনতন্ত্র ছিলনা, আজও নেই। আওয়ামী লীগ কখনো গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা একনায়কতন্ত্রে ও বাকশালী ধ্যান ধারনায় বিশ্বাস করে, ইদানিং আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের কথা শুনলে এমনটাই মনে হয়।
আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে কিন্তু তারা হয়তো জানেনা খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বেই স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা বেঈমানি করেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষেন নয়ন মনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেঈমানী করেন নি, জনগণের পাশে থেকেছেন। তিনি কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেননি। নিজের কথার উপর অটল থেকেছেন। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।

পরিশেষে বলছি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চাই, যাতে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এমতাবস্থায় আমরা সর্বপ্রথম উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। বিজয় দিবসের ৫০তম বার্ষিকীতে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনীকে অবৈধ সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করাই হোক আমাদের শপথ।

লেখক: সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন