মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিদায় নোবেলজয়ী ‘নৈতিক বিবেক’!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু (৯০) আর নেই। গতকাল রোববার টুটুর মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকানদের জন্য যারা স্বাধীনতা এনেছেন, তার অন্যতম আর্চবিশপ এমিরিটাস ডেসমন্ড টুটুর মৃত্যুতে আরেকটি শোকের অধ্যায় শুরু হলো। ডেসমন্ড টুটু নিজেকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে অন্যদের থেকে আলাদা করেছেন। সার্বজনীন মানবাধিকারের একজন চ্যাম্পিয়নও তিনি। কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তাকে মাঝে মাঝেই দক্ষিণ আফ্রিকার ‘নৈতিক বিবেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়া বর্ণবাদী রাজনীতি দ্বারা দশকের পর দশক ধরে বিভক্ত জাতিকে তিনি একত্রিত করেছেন।

কোনো সহিংসতা ছাড়াই বর্ণবাদের বিরোধিতা করার জন্য ১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন ডেসমন্ড টুটু। এর এক দশক পরে তিনি শাসকগোষ্ঠীর পতন প্রত্যক্ষ করেন এবং ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচ্ছিন্নতার সময়কালে সঙ্ঘটিত নৃশংসতা অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছিল এই কমিশন।

সেইন্ট জর্জেসের সামনের সিঁড়ি থেকে তিনি বর্ণবাদকে চিরবিদায় দিতে বহু মিছিল ও প্রচারণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। কারণ, সেইন্ট জর্জেস পরিচিত হয়ে উঠেছিল ‘পিপলস ক্যাথেড্রাল’ এবং জনগণের গণতন্ত্রের এক শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘজীবনের বন্ধু ছিলেন ডেসমন্ড টুটু। দীর্ঘদিন তারা দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েতো শহরের ভিলাকাজি স্ট্রিটে বসবাস করতেন। বিশ্বের মধ্যে এটাই একমাত্র স্ট্রিট বা সড়ক, যেখানে শান্তিতে দু’জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর অবস্থান ছিল।

ডেসমন্ড টুটুর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন বহু নাগরিক। তাদের কাছে এ খবর যেন বড় এক ঝড়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সব সময় তিনি একীভূত রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে দেশের উত্তেজনা ও জটিল সময়গুলোতে।

আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু ট্রাস্ট রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, কেপটাউনের ওয়েসিস ফ্রেইল কেয়ার সেন্টারে টুটু শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ার পর টুটুকে ২০১৫ সাল থেকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

টুটু ট্রাস্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সাধারণত তিনি সচেতনতা বাড়াতে এবং অন্যদের কষ্ট কমানোর জন্য একটি শিক্ষার সুযোগে নিজের দুর্ভাগ্যকে পরিণত করেছিলেন’। ‘তিনি বিশ্বকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, তার প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি এটি সনাক্ত করা হবে এটি পরিচালনা করার সুযোগ ততোই ভাল’।

সা¤প্রতিক বছরগুলোতে তিনি এবং তার স্ত্রী লিয়া কেপ টাউনের বাইরে একটি অবসর স¤প্রদায়ে বসবাস করতেন। ১৯৮০-এর দশক জুড়ে - যখন দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবাদ বিরোধী সহিংসতায় আঁকড়ে ধরেছিল এবং পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে সুইপিং ক্ষমতা প্রদান করে জরুরিী অবস্থা ছিল- টুটু ছিলেন সবচেয়ে বিশিষ্ট কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে একজন যারা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কথা বলতে সক্ষম ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত, দৃঢ়চেতা, তিনি একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং বর্ণবাদী নেতারা পরিবর্তনের জন্য ধার্মিক সমর্থন জোগাড় করার জন্য উপযুক্ত ধর্মগ্রন্থ উদ্ধৃত করার জন্য তার চতুর প্রতিভাকে ছাড় না দিতে শিখেছিলেন।
১৯৮৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার মানবাধিকারের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর চ্যাম্পিয়নদের একজন হিসাবে তার মর্যাদাকে হাইলাইট করেছে। এটি একটি দায়িত্ব যা তিনি তার বাকি জীবনে গুরুত্ব সহকারে পালন করেছিলেন।

২৭ বছর কারাগারে থাকার পর ১৯৯০ সালে ম্যান্ডেলা কেপটাউনে টুটুর বাসভবনে তার প্রথম স্বাধীনতার রাত কাটিয়েছিলেন। পরে ম্যান্ডেলা টুটুকে ‘জনগণের আর্চবিশপ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
১৯৯৪ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ম্যান্ডেলা টুটুকে সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছিলেন, যা বর্ণবাদ ব্যবস্থার অপব্যবহার উন্মোচন করেছিল।

ডেসমন্ড এমপিলো টুটু ১৯৩১ সালের ৭ অক্টোবর জোহানেসবার্গের পশ্চিমে ক্লার্কসডর্পে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৮ সালে রোসেটেনভিলের সেন্ট পিটার্স থিওলজিক্যাল কলেজে যাজক হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য প্রবেশ করার আগে একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে নিযুক্ত হন এবং ছয় বছর পরে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যাপ্লেন হন। ছোট দক্ষিণ আফ্রিকান রাজ্য লেসোথোতে চলে যান এবং ব্রিটেনে চলে যান। ১৯৭৫ সালে টুটু দেশে ফিরে আসেন। তিনি লেসোথোর বিশপ হন, দক্ষিণ আফ্রিকান গির্জার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন এবং ১৯৮৫ সালে জোহানেসবার্গের প্রথম কালো অ্যাংলিকান বিশপ হন এবং তারপর ১৯৮৬ সালে কেপ টাউনের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আর্চবিশপ। সূত্র : এপি, সিএনএন, আল জাজিরা ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন