ইনকিলাব ডেস্ক : ৩০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও চাকরি পাননি বিশ্বজয়ী আলীবাবার জ্যাক মা। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গিয়েছিলেন জ্যাক মা। তিনি তখন চীনের একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষক। মান্দারিন ভাষাভাষি চীনা ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্য একটি অনুবাদ কেন্দ্র খুলেছিলেন তিনি। ওই অনুবাদ কেন্দ্রের কাজেই যুক্তরাষ্ট্রে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পরিচিত হন ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাথে। জ্যাক মা জানতে পারেন, সবকিছুই জানা যায় ইন্টারনেট থেকে। জ্যাক নেটে বিয়ার সম্পর্কে তথ্য জানতে সার্চ করলেন। তিনি দেখলেন, ইন্টারনেটে কোনো তথ্যই চাইনিজ ভাষাভাষিদের জন্য নেই। এমনকি চীন নিয়ে কোনো তথ্যই নেই! দেশে ফিরে জ্যাক নতুন একটি কোম্পানি খুলে বসলেন। একটি ওয়েবসাইট নির্মাণ করে রফতানিমুখী চীনা কোম্পানিগুলোর তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করলেন। জ্যাক মার ওই ওয়েবসাইটটিকে বলা হয় চীনের প্রথম ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটটি ব্যবসায় করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এর চার বছর পর জ্যাক মা আলিবাবা নামের নতুন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানিটিই বর্তমান বিশ্বে ই-কর্মাসের সফলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আলিবাবার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করেই জ্যাক চীনের সবচেয়ে বড় ধনী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
আলিবাবার ১২ ভাগ শেয়ার বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এই শেয়ারের মোট মূল্যমান ২০ বিলিয়ন ডলার। কীভাবে বর্তমান ই-কমার্স বাণিজ্যে সফল হতে হবে তার বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত জ্যাক মা। এত সফলতার পরও জ্যাক মা এখনো কোডিং বা ওয়েবসাইট ডিজাইনের ভাষা জানেন না। তিনি কলেজের ভর্তি-পরীক্ষায় পরপর দুইবার ফেল করেছিলেন। জ্যাক মা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৪ সালে চীনের হাংজুতে। তার বাবা-মা গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে জীবন ধারণ করতেন। শৈশবে আমি উদ্বিঘœ ছিলাম, কিন্তু কখনই ভীত ছিলাম না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবসময়ই আমার চাইতে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু আমি ভেবেছি আর লড়াই করেছি। শৈশব থেকেই ইংরেজি শেখার জন্য সবসময়ই চীনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করতেন। এছাড়া, নিজের একটি রেডিও কেনেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল রেডিওতে নিয়মিত ইংরেজি শোনা।
ইংরেজি ভালো শিখতে পারলেও গণিতে বারবার ফেল করতেন তিনি। গণিতে জ্যাকের বাজে দশার কারণে কলেজ ভর্তি পরীক্ষায়ও দুইবার ফেল করেছেন। তবে তৃতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকে যান জ্যাক মা। এবার তিনি হাংজু টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষে চাকরি পাচ্ছিলেন না জ্যাক মা। এমনকি তিনি একটি রেস্টুরেন্টে ম্যানেজারের চাকরির জন্যও আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাও হয়নি। শেষপর্যন্ত তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ানোর চাকরি পান। মাসে ১২ ডলার বেতন পেতেন জ্যাক।
জ্যাকের এই পরিস্থিতি বদলে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে। চীন রফতানি বাণিজ্যে খুব ভালো করতে শুরু করে। তখন তিনি চীনের রফতানিমুখী ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্য একটি অনুবাদ কেন্দ্র চালু করেন। এই অনুবাদ কেন্দ্রের অংশ হিসেবেই জ্যাক জীবনে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যান। যুক্তরাষ্ট্র গিয়েই প্রথম জানতে পারেন ইন্টারনেট সম্পর্কে। তখন তিনি চায়না পেইজ নামের একটি ওয়েবসাইট চালু করেন। কিন্তু ওই উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তিনি নিজের সতেরজন বন্ধুকে একত্রে করেন আলিবাবা নামের ওয়েবসাইটটি তৈরি করার জন্য। এভাবেই শুরু হয় আলিবাবার পথচলা। আলিবাবা নামের ওয়েবসাইটটিতে রফতানিকারকরা নিজেদের পণ্যগুলো সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে পারে। আর আমদানিকারকরা এই তথ্যগুলো সম্পর্কে জেনে ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। এক বছরের মধ্যেই গোল্ডম্যান সেকস ও সফটব্যাংক মোট ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে জ্যাক মা-এর এই উদ্যোগে। ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু না জানলেও কীভাবে ই-কমার্স বাণিজ্যের গুরু হয়ে উঠলেন জ্যাক মা? এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন তার শুরুর দিকের এক সহকর্মী পোর্টার এরিস ম্যান। এরিস ম্যান বলেন, জ্যাক খুব ভালো বক্তা। ও নিজের স্বপ্নগুলো সকলের মধ্যে খুব সহজেই ছড়িয়ে দিতে পারে। জ্যাক আমাদেরকে সবসময় বলত, আমরা সবাই তরুণ এবং কখনই নিজেরা লড়াই থেকে সটকে পড়ব না। জ্যাক মা, নিজের সংগঠনের সহকর্মীদেরকে আনন্দেও রাখতেও পটু। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সুযোগ পেলেই নিজের সহকর্মীদের মুখে হাসি ফুটাতে তৎপর থাকেন জ্যাক। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জ্যাক মা প্রতিবছর ট্যালেন্ট শো নামের জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে। ওই অনুষ্ঠানে আলিবাবার কর্মীরা সর্বোচ্চ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন। প্রতিষ্ঠানের কাজকে সহজতর করার জন্য ২০০০ সালে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন জ্যাক মা। এরপর তিনি আলিবাবার চেয়ারম্যান হন। ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন