বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাইফস্টাইল

এই শীতে খান ফুলকপি

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৭ পিএম

শীতকাল নানা প্রকার শাকসবজির ভরা মৌসুম। এ সময়ে বাজারে টাটকা মাক সবজি প্রচুর পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি। শাক সবজিতে মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন খনিজ লবণ ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান প্রচুর পাওয়া যায়। সবজির ভিটামিন আমাদের নানা রোগ ব্যাধি থেকে দেহকে রক্ষা করে। আমাদের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে বিশেষ উপকারী কাজ গুলোর মধ্যে ফুলকপির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। এই ফুলকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, সি। তাছাড়া শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় আয়রণ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সালফার। ফুলকপির ডাঁটা ও সবুজ পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। যা আমরা গ্রহণ করে আমাদের দেহের নিত্যদিনের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে পারি। তাছাড়া মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুলকপি উদ্ভিদ জগতের ক্রুসিফেরি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ব্রাসিকা ওলেরেসিয়া।

পুষ্টি উপাদান: পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ফুলকপিতে পুষ্টি উপাদান নিম্নরুপ: আমিষ ২.৬ গ্রাম, শর্করা ৭.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ২ গ্রাস, ক্যালসিয়াম ৪১ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৫ মিলিগ্রাম, খাদ্য শক্তি ৪১ কিলোক্যালরি, ফসফরাস ৫৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৫৩ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১০.০২ মিলিগ্রাম, বি-২০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১৫.৫ মাইক্রোগ্রাম, ফলেট ৫৭ মাইক্রোগ্রাম। ফুলকপি সবজি ও মাছ, মাংসের সাথে তরকারি করে খাওয়া যায়। ফুলকপির ডাটা ও সবুজ পাতায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। সুতরাং ফুলকপির ডাটা ও কচি সবুজ পাতা খেয়ে দেহের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে পারি। খনিজ পদার্থের মধ্যে মানব দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তবে মনে রাখবেন শাক সবজিতে অক্সালিক এসিড থাকায় শাক সবজির ক্যালসিয়াম শরীরে পুরোপুরি শোষিত হতে পারে না। তাই একটু বেশিই শাক সবজি খেতে হয়। ক্যালসিয়াম দেহের হাঁড় ও দাঁত গঠনে অংশ নেয় ও রক্ত সঞ্চালন, পেশী সংকোচন সহ দেহের নানা কাজে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে ‘টিটেনি’ নামক এক ধরনের প্রাণ ঘাতি রোগ দেখা দেয়। ভিটামিন সি দাঁত, মাড়ি ও পেশী মজবুত করে। সর্দি, কাশি ও ঠান্ডা লাগার হাত থেকে রক্ষা করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফুলকপির ভিটামিন ‘সি’ ও ম্যাগনেসিয়াম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন ‘কে’ বক্ষ নালীর সুরক্ষা করে। মানব দেহের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার কোষ জন্মাতে বাঁধার সৃষ্টি করে ফুলকপি। ফুল কপিতে বিদ্যমান ফলে উপাদান রক্তের শ্বেতরক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। তাছাড়া এ উপাদানটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য কুবই উপকারী। আমাদের দেহে রক্তের কোলেষ্টেরল বেড়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ অতিরিক্ত কোলেস্টরল কমাতে ফুলকপি বেশ ভালো সাহায্য করে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য একটি ভালো খাদ্য।
উপকারিতা ঃ আমাদের শরীরে রক্ত তৈরীতে আয়রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং কিশোরী এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি খুবই উপকারি সবজি। কারণ ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ পাওয়া যায়। আমাদের শরীর বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্য ফুলকপি বেশ প্রয়োজনীয় একটি সবজি। ফুলকপি ও বাধাকপিতে ইনডলস নামক একটি উপাদান থাকে যা দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকস্থলির ক্যান্সার, মূত্রথলি ও মহিলাদের প্রোস্টেট, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফুলকপির ভিটামিন এ, সি শীতকালীন নানা রোগ যেমন: সর্দি, কাশি, জ্বর ও টনসিলের সমস্যা সমাধানে বিশেষ সাহায্য করে। ফুলকপিতে সালফোরাফেন উপাদান থাকে যা ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাছাড়া শরীরে নানা প্রকার টিউমার জন্মানো বা বৃদ্ধি প্রতিহত করে। দেহের রক্তের চাপ কমায়। ফুলকপিতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান শরীরের দহন পক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া ফুলকপিতে আঁশ তাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম দ্রুত করতে সাহায্য করে। ফুলকপির ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। চোখের দৃষ্টি শক্তিকে প্রখর করে। ফুলকপিতে ভিটামিন ই বা টোকোফেরল থাকে। যা বন্ধাত্ব বা যে মহিলাদের সন্তান হয় না তাদের জন্য ফুলকপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুলকপিতে ভিটামিন কে থাকে যা প্রোথ্রম্বিন নামক এক পদার্থ তৈরী করে যা শরীর কেটে গেলে রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে।

সতর্কতা ঃ ফুলকপি রান্নার সময় টুকরো টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে বা ধুয়ে নিবেন না। এতে ফুলকপির খাদ্য উপাদান পানির সাথে মিশে চলে যায়। ফুলকপি কেটে ফ্রিজে বা অন্য কোন স্থানে খোলা অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। কিডনী রোগে যারা ভুগছেন তারা ফুলকপি না খাওয়াই ভালো। কারণ ফুলকপিতে থাকা উদ্ভিজ আমিষ দুর্বল কিডনীর উপর চাপ সৃষ্টি করে। যারা গলার থাইরয়েড গ্রন্থির রোগে ভুগছেন তারা ফুলকপি খাবেন না। বেশী করে শীতের সবজি খান বিভিন্ন প্রকার রোগের হাত থেকে বেঁচে থাকুন।

মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন