যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সোমবার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবস পালন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ বছর স্থানীয় সময় সোমবার পালিত হচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবস। বিখ্যাত মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং সারা জীবন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ও কৃষ্ণাঙ্গদের সমঅধিকার আদায়ে লড়াই করে গেছেন। তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রে কালো মানুষ পেয়েছে সাদা মানুষের সমান অধিকার। কিংবদন্তি নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে এক কৃষ্ণাঙ্গ যাজক পরিবারে জন্ম নেন। মাইকেল কিং সিনিয়র ও আলবার্টা উইলিয়ামস কিংয়ের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। প্রথমে তার নাম রাখা হয় মাইকেল কিং জুনিয়র। ১৯৩৪ সালে ছেলের ছয় বছর বয়সে বাবা মাইকেল বিখ্যাত জার্মান সংস্কারক মার্টিন লুথারের নামানুসারে ছেলের নাম রাখেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ১৯৫৫ সালে কিং ডেক্সর্টা অ্যাভিনিউয়ের ব্যাপটিস্ট চার্চের যাজক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি সরাসরি কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৫৫ সালে মন্টগোমারিতে শুরু হয় ঐতিহাসিক বাস ধর্মঘট। ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৫৫ সালের ১ ডিসেম্বর, বাসের আসনকে কেন্দ্র করে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অধিকাংশ রাজ্যেই বাসের সামনের দিকে বসার অধিকার ছিল না কালোদের। শ্বেতাঙ্গ উঠলে সংরক্ষিত আসন ছেড়ে দিতে হবে এই নিয়ম মানলেন না কৃষ্ণাঙ্গ নারী রোজা পার্কস। তিনি প্রতিবাদ করলেন। এটা ছিল সরকারি আইনের লংঘন। রোজাকে থানায় নিয়ে ১০ ডলার জরিমানা করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে লুথার কিং ও অন্য কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিস্টান ধর্মযাজকেরা বাস সার্ভিস বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। টানা ৩৮১ দিন নানা প্রতিকূলতার পরেও কৃষ্ণাঙ্গদের সরকারি বাস বয়কট চলতে থাকলে সুপ্রিম কোর্ট বাসের এই বর্ণবিদ্বেষী ব্যবস্থাকে সংবিধান বিরোধী বলে ঘোষণা করেন। অবশেষে বাসে তাদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ আন্দোলনে জয়ের পর কিংয়ের নাম ছড়িয়ে পরে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। তার এই অহিংস আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসেন বহু কৃষ্ণাঙ্গ নেতা। আমেরিকা জুড়েই বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জেগে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় কিং ১৯৬৩ সালে সরকারের নেয়া বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষণা করেন। কিং তার অনুসারীদের নিয়ে দুই মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান। এর মূল লক্ষ্য ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের শ্বেতাঙ্গদের সমান অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে হবে, কালোদের সর্বত্র প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। এমনি এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে অ্যালাবামার পুলিশ সমবেত জনতার ওপর দমনমূলক নিপীড়ন চালায়। মার্টিন লুথার কিংসহ আরো অনেকেই সে সময় গ্রেফতার হন। এই ঘটনা ব্যাপক সাড়া জাগায় বিশ্বব্যাপী। এরপর তিনি স্থির করেন দেশ জুড়ে শুরু করবেন ফ্রিডম মার্চ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুরু হয় ওয়াশিংটন অভিমুখে পদযাত্রা। ১৯৬৩ সালে ২৭ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালে সমাবেত হয় প্রায় আড়াই লাখের বেশি মানুষ। তাদের সামনে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন কিং, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে’ (আই হ্যাভ এ ড্রিম)। ভাষণে তিনি বলেন, কীভাবে বর্ণবৈষম্য গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি তুলে ধরেন ভবিষ্যতের আমেরিকা নিয়ে তার আশাবাদ। যেখানে সব আমেরিকান হবে সমান। এটাই হবে সত্যিকারের স্বপ্নের আমেরিকা। তার এই বিখ্যাত ভাষণের প্রভাবেই ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার আইন ও ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়। ভয়েস অব আমেরিকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন