বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে বিদ্যুতের ব্যবহার। বিদ্যুতের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ায় আরো তিন বছর জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। বিদায়ী বছরে রেকর্ড পরিমাণ চাহিদা ছিল বিদ্যুতের। ফলে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোয় ব্ল্যাকআউট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দামও ছিল তুঙ্গে। খবর দ্য গার্ডিয়ান। আইইএর বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, আগামী তিন বছর পর্যন্ত দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন না আনলে ভোক্তা ও দেশগুলোর অর্থনীতিতে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় পারিবারিক ও ব্যবসায়িক দুর্দশার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। আইএর তথ্য বলছে, গত বছর বিদ্যুতের বৈশ্বিক চাহিদা ৬ শতাংশ বেড়েছে। এর জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বিদ্যুতের মোট চাহিদা বৃদ্ধির অর্ধেকই চীনে। ২০২০ সালের তুলনায় বিদায়ী বছরে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ বেড়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা সরবরাহ না হওয়ায় গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চীন ও ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। ফলে এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিতে ভাটা পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে বিদ্যুতের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দেশের অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তবে বৈশ্বিক গ্যাস সরবরাহ সঙ্কট দেখা দেয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বগতি ছিল। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এর কারণে দেশটিতে বিদ্যুৎ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। লোকসান গুনছেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা। বন্ধ হয়ে যায় কয়েকটি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার সাথে তাল মেলাতে নিম্নমানের সস্তা কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়। এতে কার্বন নিঃসরণও বেড়েছে। গত বছর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে রেকর্ড পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়। এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান ফাতিহ বিরল। আইএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস ৬ শতাংশ বেড়েছে। তা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশগুলোর অর্থনীতি। গত বছর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু হয়। এর কারণে চাহিদা বাড়ে বিদ্যুতের। চাহিদা মেটাতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ৯ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এদিকে আইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ী বছরে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ে। এদিকে নিম্নমানের উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৭ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে দুই বছর কার্বন নিঃসরণ পড়তির দিকে থাকলেও গত বছর তা রেকর্ড গড়ে। এ বিষয়ে আইএর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে নিট জিরো কার্বন লক্ষ্য অর্জন করতে আগামী আট বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন নিঃসরণ ৫৫ শতাংশ কমাতে হবে। তবে বর্তমান নীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না হলে আগামী তিন বছর কার্বন নিঃসরণ একই মাত্রায় থাকবে, যা নিট জিরো লক্ষ্য অর্জনে বিরাট প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে। গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন