তৃণমূলের অন্দরে আবার প্রবল গোলমাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেকের প্রকাশ্য সমালোচনা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে অঘোষিত দুই নম্বর নেতা এখন তার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গেই দলের প্রবীণ সাংসদ ও লোকসভার চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সেই বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন সাবেক সাংসদ ও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যেভাবে প্রকাশ্যে অভিষেকের বিরুদ্ধে বলেছেন কল্যাণ এবং কুণাল তার জবাব দিয়েছেন, তাতে জলঘোলা বাড়ছে।
সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি চান করোনার এই বাড়বাড়ন্তের সময়ে পুরসভার ভোট পিছিয়ে দেয়া হোক। বড় জমায়েতের অনুমতিও বন্ধ করে দেয়া হোক। যেভাবে গঙ্গাসাগর মেলা হচ্ছে, অভিষেক তার বিপক্ষে। এই সময়ে গঙ্গাসাগর মেলার মতো বিশাল জমায়েত তিনি চাইছেন না। অভিষেক অবশ্য জানিয়েছেন, এটা তার ব্যক্তিগত মত। কিন্তু এরপরই অভিষেকের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন কল্যাণ। তৃণমূলে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক।
কল্যাণের বক্তব্য, অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এই পদে থেকে তিনি ব্যক্তিগত মন্তব্য করতে পারেন না। তারও নানা বিষয়ে ব্যক্তিগত মত আছে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলার কারণেই তিনি তা প্রকাশ্যে বলেন না। কল্যাণের মতে, অভিষেক যা বলেছেন, তা মমতার বিরোধিতা করার সামিল। এভাবে তিনি রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
কল্যাণ সরাসরি অভিষেকের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, তিনি তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে নেতা বলে মানেন না। তবে তিনি পদকে সম্মান করেন। অভিষেক যদি ত্রিপুরা ও গোয়া জিতিয়ে আনতে পারেন, তাহলে তাকে তিনি নেতা হিসাবে মানবেন। কল্যাণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, ''দলের সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই আছেন অভিষেক। তিনি কিছু বললে, আমাদের মতো সাধারণ কর্মীদের তা মুখ বন্ধ করে শোনা উচিত।''
এর জবাবে কল্যাণ বলেছেন, তিনি জেল থেকে মমতাকে আক্রমণ করেননি। প্রিজন ভ্যান থেকেও করেননি। কবে কে দলে আছেন, কবে নেই, তা তিনি জানেন না। তবে তার চরিত্র হনন করতে এলে তিনিও দেখবেন নিয়ম ভাঙা হচ্ছে কিনা। উল্লেখ্য, কুণালের বিরুদ্ধে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। সেসময় তিনি তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। কল্যাণ সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন।
অভিষেকের সঙ্গে কল্যাণের বিরোধ আগে থেকেই চলছিল। সেই বিরোধ ছিল সাবেক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। রাজীব দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেয়ার পর আবার তৃণমূলে ফিরেছেন। কিন্তু কল্যাণ চাননি রাজীব আবার দলে ফিরুন। তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, এই আপত্তি উপেক্ষা করে অভিষেক তাকে দলে নিয়েছেন এবং ত্রিপুরার দায়িত্ব দিয়েছেন।
সম্প্রতি রাজীব ডোজমুড়ে তৃণমূলের এক প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, তারপর কল্যাণ বলেন, ''রাজীব ২০২৪ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরায় থাকবে বলে অভিষেকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ও এখানে কী করছে? বিয়ে বাড়ি, শ্রাদ্ধ বাড়ির নাম করে ওকে এলাকায় ঢুকতে দেব না।'' ভাইপো ও দলের প্রবীণ সাংসদের ঝগড়ায় মমতা এখনো পর্যন্ত একটা কথাও বলেননি। দলও তাকিয়ে আছে মমতার দিকে। তিনি কী করে এই ঝগড়া মেটাবেন তার দিকে।
কুণাল ঘোষ টুইট করে জানিয়েছেন, 'ক্লোজড চ্যাপ্টার'। এর বেশিকিছু তিনি আর লেখেননি। তবে সূত্র জানাচ্ছে, শীর্ষনেতৃত্বের হস্তক্ষেপে আপাতত বিরোধে ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলবেন না। যার যা বলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলবেন। সূত্র: পিটিআই, আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন