চলতি বছরই ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ‘প্লাটিনাম জুবিলি’ বা ৭০ বছর পূর্তি পালন করবে বাকিংহাম প্যালেস। এ উপলক্ষ্যে পুরো দেশজুড়েই থাকবে নানা আয়োজন। এই অনুষ্ঠানটি রানির সম্মানে দেশ জুড়ে উদযাপিত একটি মাইলফলক হবে যিনি জাতির জীবনে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছেন।
যুদ্ধ-পরবর্তী ব্রিটেন থেকে যখন ভার্চুয়াল মুদ্রা, চালকবিহীন গাড়ি এবং মহামারীর বিশ্বে রেশনিং চালু ছিল, তখন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রানির সময়কাল দেশটির ইতিহাসের সাথে চিরকালের জন্য জড়িত। তার অনন্য অবস্থান এবং তার রাজত্বের দৈর্ঘ্য রাজকীয় লেখক পেনি জুনরকে বলতে প্ররোচিত করেছিল, ‘আমরা সম্ভবত তার মতো আর কাউকে কখনও দেখতে পাব না।’
এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্ট্রিট পার্টি থেকে শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে নামি দামি তারকাদের দিয়ে একটি কনসার্ট আয়োজনের কথা জানিয়েছে প্যালেস। সিংহাসনের ৭০ বছর উপলক্ষে রানির বাসভবনগুলো সাধারণ মানুষকে কাছে থেকে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। জুনের প্রথম সপ্তাহেই উৎসব আয়োজনের ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসময়ের আগে দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে। আসছে ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে সিংহাসনে আরোহণের প্লাটিনাম জুবিলি পালন করবেন তিনি।
ব্রিটেনের দ্বিতীয় এলিজাবেথ হচ্ছেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র, অর্থাৎ কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান রানি ও রাষ্ট্রপ্রধান। কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোস, বাহামাস, গ্রানাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্রস ও নেভিস। কমনওয়েলথ প্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এরই মধ্যে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্ণ করেছেন। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি সমর্থ হলেন এ বিরল দীর্ঘতম সময়কে ছুঁয়ে দিতে। এর আগে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার। ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন ভিক্টোরিয়া। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ অবধি রানির আসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ।
রানির সিংহাসনের হীরকজয়ন্তী পালনের অভিজাত এ বিশেষ স্মারক বইয়ে উঠে এসেছে তার নিয়ন্ত্রণাধীন রাজ্যের নানা ছবি, অজানা কথামালা। প্রতি সপ্তাহে রানি এলিজাবেথের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের নিয়মের মধ্যে পড়ে। আর এই বিশেষ সময়টুকু সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ব্রিটিশ রাজনীতির বাইরে, হাঁফ ছেড়ে অনন্য দুর্লভ সময়টুকু তার কাছ থেকে পাই। এমন কোনো বিষয় নেই তার স্বচ্ছ আয়ত্তে নেই। ব্রিটিশ রাজনীতি কোন পথে হাঁটছে, সবই তার নখদর্পণে, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির খুঁটিনাটি বিষয় তার নজরে আছে। আর সেটি আবছা নয়, বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে।
সুদীর্ঘ ছয় দশক বিশ্ব অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে; প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থেকে রানী এলিজাবেথ মানুষের কল্যাণে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬। তার পিতা ষষ্ঠ জর্জ ও মাতা এলিজাবেথ বউয়েস। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। আর সে সময় ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ। ৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২-এ রানি ছিলেন ২৫ বছর বয়সী একজন যুবতী, যখন তার পৃথিবী পরিবর্তিত হয়েছিল, যেদিন তার পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা গিয়েছিলেন এবং তিনি রাষ্ট্রের প্রধান হয়েছিলেন - প্রায় ৭০ বছর আগে। এখন ৯৫ বছর বয়সী রানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেতা স্যার উইনস্টন চার্চিল থেকে বর্তমানে বরিস জনসন পর্যন্ত ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীকে আসতে দেখেছেন।
বর্ধিত চার দিনের প্ল্যাটিনাম জুবিলি আগামী ২ জুন ‘ট্রুপিং দ্য কালার’ দিয়ে শুরু হবে, যা মহামারীর পরে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে মঞ্চস্থ হবে। পরের দিন সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে রানির রাজত্বের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের একটি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রানি এবং তার পরিবারের জন্য ঘোড়দৌড় যা এপসম ডাউনসে অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন বাকিংহাম প্যালেসে একটি তারকা খচিত কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র : ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন