রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সিনহা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

খালাসপ্রাপ্ত ৭ জন কারামুক্ত

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশজুড়ে আলোচিত চাঞ্চল্যকর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি খুনী প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এই রায় দ্রুত কার্যকর করার এবং বন্দুক যুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার বাণিজ্যের পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি উঠছে। ভোক্তভোগীদের মতে তৎকালীন কক্সবাজার জেলা ও পুলিশ প্রশাসনে যারা ছিলেন তাদের কি কোনো দায়িত্ব ছিলনা প্রদীপ-লিয়াকতদের অপকর্মের নিয়ন্ত্রণ করার? নাকি তারাও প্রদীপ-লিয়াকতদের লুটপাট বাণিজ্যের সুবিধাভোগী ছিলেন? তারাও এ অপকর্মের দায় এড়াতে পারেন না। তাই তাদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করেন মামলার বাদী পক্ষ এবং টেকনাফের নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের।

ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা বলেন, ওসি প্রদীপের ইয়াবা কারবার ও গুম, খুনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে ৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়। এছাড়া ওসি প্রদীপ তাকে ঢাকা থেকে আটক করে থানায় এনে চরম নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় প্রায় এক বছর জেল খাটতে বাধ্য করে। হাতের নখ তুলে নেয় এবং চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে চোখ নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করেছিল। ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকর এবং যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা এ অপকর্মের সাহস পেল তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।

টেকনাফ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হালিমা খাতুন তার ছেলে আবদুল আজিজের হত্যার বিচারে প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসির রায়ে সন্তুষ্ট। তবে এই রায় দ্রুত কার্যকর চান তিনি। টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার হাফেজ আহমদ বলেন, আমার ভাই শাহাব উদ্দিনকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে ওসি প্রদীপ। কিন্তু আমরা এত টাকা দিতে পারিনি বলে নির্মমভাবে হত্যা করে আমার ভাইকে। আমি ও আমার পরিবার চাই খুনি প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর হউক।

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের এখন আলাদা কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

গত সোমবার ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর সন্ধ্যায় কারাগারে নিয়ে লিয়াকত এবং প্রদীপকে আলাদা করা হয়। এরপর তাদের কনডেম সেলে পাঠানো হয়। জানা গেছে, কক্সবাজার কারাগারে কোনো সেল না থাকায় লিয়াকত এবং প্রদীপকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেটিকেই কনডেম সেল ঘোষণা করেছে কারা কতৃপক্ষ। এর আগে গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার রায়ে বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই মামলার ২৫ আসামির আরো ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অপর ৬ আসামিকে খালাস দেন।

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলা থেকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যসহ সাতজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। খালাস পাওয়া ৭ জনকে কারামুক্তি দিয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগার। গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলম জানান, আদালত থেকে খালাস পাওয়া আসামিদের কারাগারে রাখার এখতিয়ার কারা কর্তৃপক্ষের নেই। আদালত যদি বলে এখনই মুক্তি দেওয়া হোক, তাহলে আমরা মুক্তি দিতে বাধ্য। কারা ফটকে আদালত থেকে আদেশনামা পাওয়ার পরই আমরা তাদের ছেড়ে দিই।

মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন- বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।

মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় দুই প্রধান আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায়ের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে জানালেও সাতজনের খালাস নিয়ে মামলার বাদী সিনহার বড় বোন শারমীন শাহরিয়ার অসন্তোষ আছে। তার মতে তাদেরও কিছুটা দায়বদ্ধতা ছিল। সেক্ষেত্রে হয়ত তাদের কিছু সাজা হতে পারত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৩১ এএম says : 0
মাননীয় প্রধান বিচারপতি ফাইলটি পাওয়া মাত্র যদি এই দুইজনের মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করতে জরুরি আদেশ প্রধান করেন,জনগণ এত খুশি হবেন,সেটি আর বলার নয়।
Total Reply(0)
জব্বার ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:২৭ এএম says : 0
দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক
Total Reply(0)
শামিম আহমেদ ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৩৩ এএম says : 0
একজন মেজরের বুকে গুলি চালানো আর দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালানো একই কথা। কারণ একজন মেজর একটা দেশের সম্পদ। তাই এদের মৃত্যু দণ্ড কার্যকর করা হোক as soon as possible.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন