বিশ্ব বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা যেন কাটছেই না। মহামারির শুরু থেকেই চলছে সরবরাহ ব্যবস্থার বাধা। বিধিনিষেধ শিথিলের পর তুমুল ভোক্তা চাহিদা পণ্য সরবরাহকে আরো জটিল করে তুলেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় করোনা প্রাদুর্ভাব বিশ্ব বাণিজ্যে চাপিয়ে দিয়েছে বিধিনিষেধ। বিশেষ করে গত বছরের শেষদিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে শঙ্কা তৈরি করে। তবে সব অনিশ্চয়তা ছাপিয়ে জানুয়ারিতে বিশ্ব বাণিজ্য করোনাপূর্ব পর্যায়কে ছাড়িয়ে গেছে। জার্মান অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি একটি পরিসংখ্যানে বিশ্ব বাণিজ্য করোনাপূর্ব পর্যায়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। কিয়েল ট্রেড ইন্ডিকেটর ডাটা অনুসারে, বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও জানুয়ারিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম মহামারীপূর্ব স্তরকে ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারিতে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ করোনা-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগের সর্বোচ্চ পর্যায় ২০১৮ সালের আগস্টের চেয়েও ৭ শতাংশ বেশি। কিয়েল ট্রেড ইন্ডিকেটরের প্রধান ভিনসেন্ট স্ট্যামার বলেন, ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব সত্তে¡ও বৈশ্বিক বাণিজ্য আগের চেয়ে আরো শক্তিশালীভাবে এগিয়ে চলছে। হঠাৎ করেই চাহিদা উল্লম্ফনের কারণেই সে অনুযায়ী সরবরাহ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থার বাধাগুলো এখনো অব্যাহত রয়েছে। করোনা সংকট লজিস্টিক খাতের চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। পণ্য পরিবহনে শিপিং কনটেইনার পেতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি শ্রমসংকট সংস্থাগুলোকে পূর্ণসক্ষমতায় কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বন্দরে যানজট ও বিলম্ব পণ্য পরিবহনের ব্যয়কে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। কিয়েল ট্রেড ইন্ডিকেটর জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর বাণিজ্যে ওমিক্রনের ধাক্কা এখনো খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিশেষ করে জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি আগের মাসের চেয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে আমদানি ১ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে দেখলে গত মাসে ২৭ দেশের বøকটির রফতানি দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। যদিও দেশগুলোর আমদানি দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানির দুই বাণিজ্যেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন দেয়া হয়েছে। আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে দেশটির রফতানি ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং আমদানি দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত মাসে চীনের আমদানি ও রফতানি সংকুচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়েল ট্রেড ইন্ডিকেটর। এ সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির আমদানি আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং রফতানি দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ভিনসেন্ট স্ট্যামার বলেন, চীনা নববর্ষ ও বিশেষ করে শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজন দেশটির অর্থনীতির একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই এ পরিসংখ্যানকে দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য খুব খারাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। করোনাজনিত বিধিনিষেধ শিথিলের পর অর্থনীতি উন্মুক্ত হওয়ায় পণ্য ও কাঁচামালের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিবন্ধকতায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। স¤প্রতি দুবাইভিত্তিক বন্দর অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ড ২০২১ সালে কনটেইনারের সংখ্যা ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ার কথা জানিয়েছে। যদিও ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের কারণে চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বৃদ্ধির হার ধীর হয়েছে। গত বছর সংস্থাটি বিশ্বজুড়ে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ২০ ফুট কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। যেখানে গত বছর সংস্থাটি ৭ কোটি ১১ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল। চলতি বছরও রেকর্ড হ্যান্ডলিংয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা করছে ডিপি ওয়ার্ল্ড। এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন