বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আল্লাহু আকবর’ স্লোগানে জবাব ছাত্রীর

গেরুয়া চরমপন্থীদের হয়রানি গেরুয়ারা মুসলিমদের শিক্ষা ধ্বংস করে দিচ্ছে : মুসকান হিজাবের পক্ষে সমর্থন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মালালার দিল্লি, কলকাতায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

গেরুয়া রুমালধারী শত শত ছেলে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে যেন নেকড়ের পালের মতো হামলে পড়েছিল একলা এক ছাত্রীর উপর। প্রথমে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও পরে সিংহীর মতো রুখে দাঁড়ান বোরকাপরা ওই ছাত্রী। তার একার ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান ছাপিয়ে যায় শত কন্ঠের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে। ওই ছাত্রী বুঝিয়ে দেন, একা হলেও ইসলামী শক্তিতে বলীয়ান তিনি। তার সাহসিকতার এ ভিডিও তোলপাড় তুলেছে সামজিক মাধ্যমগুলোতে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, নোবেলজয়ী মালালার মতো অনেকেই সমর্থন জানিয়েছেন ওই ছাত্রীকে।

২০১৪ সালে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন মুসলিমরা। এবার বিজেপি জোয়ার তুলেছে হিজাব নিষিদ্ধকরণের। সম্প্রতি কর্ণাটকের স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার জেরে প্রতিনিয়ত হিজাবধারী নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর সর্বশেষ শিকার হয়েছেন মুসকান খান নামের ওই ছাত্রী। মঙ্গলবার ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হিজাব পরা মুসকানকে তার বাইকে কর্ণাটকের পিইএস কলেজে গিয়ে নামতে দেখা যায়। তারপর গেরুয়া স্কার্ফ পরা একদল ছেলে তাকে উদ্দেশ করে কটূক্তি করে। কলেজ প্রশাসন মেয়েটিকে দল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, কারণ তারা তার দিকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে দেয় ও গালি ছুঁড়তে থাকে। মুসকান প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরে একাই প্রতিবাদ জানায়। শত শত ছেলের বিরুদ্ধে একা একটি মেয়ে হয়েও সে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে প্রতিবাদ জানায়। তার স্লোগানে ছাপিয়ে যায় শত কন্ঠের ‘জয় শ্রীরাম’ চিৎকারকেও।

গেরুয়া, হিন্দুধর্মে সম্মানিত একটি রঙ, বিজেপির প্রতীক হয়ে উঠেছে, যাকে কখনও কখনও ‘গেরুয়া পার্টি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি তার ভিত্তিকে সুসংহত করতে ইসলামবিরোধী বক্তব্য ব্যবহার করে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়েছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ভারতের কর্ণাটকে স্কুলে হিজাব পরা মুসলিম ছাত্ররা একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি স্কুল হিজাব পরা মেয়েদের ক্লাসরুম বা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (জেকেপিডিপি) সভাপতি মেহবুবা মুফতি হামলার নিন্দা করেছেন, ঘটনাটিকে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর ইসলামবিরোধী বক্তব্যের জন্য দায়ী করেছেন।

‘এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়, কারণ বিজেপি আশা করে যে, তারা ইউপি (উত্তরপ্রদেশ) নির্বাচনে মেরুকরণে সহায়তা করবে’ তিনি বলেন। সাংবাদিক নীলাঞ্জনা রায় উল্লেখ করেছেন যে, স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্ক কেবল ধর্মীয় পোশাকের চেয়ে বেশি নয়, অন্যরা ঘটনাটিকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘এটি কখনই হিজাবের বিষয়ে ছিল না - এটি সর্বদা মুসলমানদের, প্রথমে পুরুষদের, এখন সম্প্রদায়ের মহিলাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়ার বিষয়ে ছিল’ তিনি বলেন।

এ ঘটনার পরে হেনস্তার শিকার সেই মুসলিম ছাত্রী মুসকান খান বলেছেন, তিনি হিজাব পরেছেন বলে তারা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়েছে। তখন আমিও ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে জবাব দিয়েছি। আমি হিজাব পরার অধিকার রক্ষার লড়াই অব্যাহত রাখব। কর্নাটকের ওই কলেজে ইসলামি স্কার্ফ নিষিদ্ধ করাকে মুসলিম শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছে না। তারা এটাকে ভারতের সেক্যুলার সংবিধানে তাদের ধর্মবিশ্বাস নিশ্চিত থাকার আশ্বাসের ওপর আক্রমণ বলে মনে করছে। হিন্দু উগ্রবাদী গ্রুপগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলিম ছাত্রীদের প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করলে সম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার ওই ঘটনার পর মুসকান খান ভারতের এনডিটিভি নিউজ চ্যানেলকে বলেন, ‘আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার কথা ছিল। এ কারণেই আমি কলেজে প্রবেশ করেছিলাম। কিন্তু আমি বোরকা পরার কারণে তারা আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে চাচ্ছিল না।’ তিনি বলেন, উপস্থিত উগ্রবাদীদের মাত্র ১০ ভাগ ছিল আমাদের কলেজের। বাকিরা ছিল বহিরাগত।

এ ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন ভারতের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। গতকাল এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘নারী কোন কাপড় পরবে, না পরবে সেটি ঠিক করার অধিকার নারীর এবং ভারতীয় সংবিধানে তাদের সেই অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।’ তিনি লিখেছেন, ‘বিকিনি হোক কিংবা ঘোমটা, জিন্স বা হিজাব হোক, তিনি কী পরতে চান তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একজন নারীর। নারীর এ অধিকার ভারতীয় সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। নারীদের হয়রানি করা বন্ধ করুন।’

হিজাব পরে ক্লাসে প্রবেশের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানি নারী শিক্ষা অধিকারকর্মী ও শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই। তিনি এ ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর’ একটি পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। এক টুইট বার্তায় মালালা ইউসুফজাই বলেন, ‘কলেজগুলো আমাদের হিজাব বা পড়ালেখার মধ্যে যে কোনো একটিকে বাছাই করতে বলছে। হিজাব পরে মেয়েদের স্কুলে যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি ভয়ঙ্কর ভুল পদক্ষেপ। নারীদের হিজাব পরা নিয়ে কম বেশি আপত্তি থাকেই। তবে ভারতের নেতাদের উচিত মুসলমান নারীদের প্রান্তিককরণ বন্ধ করা’।

এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্ক কর্ণাটকের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় গোটা ভারতেই। রাজধানী দিল্লি ও কলকাতাতেও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নর্থ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের আয়োজন করে দ্য মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি ছাত্র সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে আয়োজিত ওই বিক্ষোভে বহু শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীও ছিলেন এবং হিজাব পরেই তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন। এসময় কর্ণাটকের আন্দোলনকারীদের সমর্থনে তারা বিভিন্ন ব্যানার বহন করেন। ব্যানারে লেখা ছিল - ‘আমরা, মোহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারী। আমরা ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করবো’ এবং ‘কর্ণাটকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’

দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের পদুচেরিতেও এর ছোঁয়া লেগেছে। মধ্যপ্রদেশের এক মন্ত্রী ইতোমধ্যে কলেজ ও স্কুলের ‘ইউনিফর্ম ড্রেস কোডের‘ বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এছাড়া পদুচেরিতে একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কসার্কাস ক্যাম্পাসে হিজাবের পক্ষে সমর্থন জানান ছাত্রছাত্রীরা। বিশাল পোস্টার, ব্যানার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল দেখা গেল। বার্তা একটাই- ‘হিজাব আমার সাংবিধানিক অধিকার’। তাদের পোস্টারে আরো লেখা, ‘রক্ত চাই রক্ত নাও, আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দাও’। বিক্ষোভকারী প্রত্যেক ছাত্রীই হিজাব পরিহিতা। ছাত্রীদের সঙ্গে এই দাবিতে শামিল ছাত্ররাও।

মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিয়ে আপত্তিতে বিজেপি শাসিত কর্ণাটকে তুমুল বিতর্ক উসকে উঠেছে দিনকয়েক আগেই। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কয়েকটি কলেজ হিজাব পরে ছাত্রীদের কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বটে, তবে ছাত্রীরা ওই পোশাক পরে ক্লাস করতে পারবেন কিনা, তা স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে মুসলিম ছাত্রীদের দাবি, তাদের হিজাব পরেই ক্লাস করার অনুমতি দিতে হবে। এসবের মাঝেই কলেজগুলোতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠনগুলোও। তাদের পালটা দাবি, হিজাব পরে ক্লাস করা যাবে না। এর পালটায় তারাও গেরুয়া উত্তরীয় পরে প্রতিবাদ শুরু করে। হিজাব ইস্যুতে পক্ষ-বিপক্ষ নানা মত তৈরি হয়েছে। রাজনীতিবিদরাও একযোগে নেমেছেন সমর্থন বা বিরোধিতায়। সূত্র : টাইমস নাউ, আল-জাজিরা, এনডিটিভি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
shirajumazumder ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:০৭ এএম says : 1
Excess of every thing is bed. so every body should be honor one each other . this is the humanity. Here is no chance to stay particular any religion .All creature of the world are made by one creator. so creator will be measured only the good activity of creature in the final day .That day will be very difficult There's will not any identity out of good work. Win and defeat both are depend on ALMIGHTY.so don't play with fire.
Total Reply(1)
Harunur Rashid ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৩৭ এএম says : 0
I guess you have no idea about Quran and Snnah. You will be better off saying nothing about religion.
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২২ এএম says : 0
হিন্দুরা মনে চায় লেংটা থাকুক তাতে মুসলিমদের সমস্যা নেই,কিন্তু মুসলিমরা তাদের শরিয়ত মোতাবেক পেশাকে থাকবে চলবে,এতে হিন্দুদের কি সমস্যা,যে ভারত মুসলিম শাসন ছিল,সে দেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ কি কারনে,যে সময় মুসলিম শাসন ছিল মুসলিমরা তো বলেন নাই যে হিন্দুরা এই ভাবে চলতে পারবে না।এই বেপারে বিশ্ব মুসলিমরা চুপ করে থাকতে পারে না ,আমেরিকার রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ও জাতি সংঘের মানব অধিকার কোথায়।
Total Reply(0)
মোঃ আনোয়ার আলী ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:২৫ এএম says : 0
হে আল্লাহ! মেয়েটিরন্যায় আমাদের সকলের হিম্মত আরো বাড়িয়ে দাও।
Total Reply(0)
MD Irfan Khan Rubel ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৫ এএম says : 0
ভারতের মতো একটা হিন্দু রাষ্ট্রের মধ্যে আমার এক বোন একাই পর্দার পক্ষ হয়ে লড়তেছে আর আমার দেশ মুসলিম রাষ্ট্র হয়ে পর্দা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
Total Reply(0)
Md. Idris Ali ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৬ এএম says : 0
"অসত্যের কাছে কভু নত নাহি হবে শির ভয়ে কাঁপে কা-পুরুষ লড়ে যায় বীর।" الله أكبر الله أكبر الله أكبر الله أكبر الله أكبر الله أكبر الله أكبر
Total Reply(0)
Rasel Mia ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৬ এএম says : 0
· সাহসী প্রিয় মুসকানের স্লোগানে বিশ্বের ৩০০ কোটি মুসলিমদের হৃদয় আজ জাগ্রত! আল্লাহু আকবার ♥️ হে-নারী শ্রদ্ধা রইল
Total Reply(0)
Taihan Patwary ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৪৭ এএম says : 0
আল্লাহু আকবার, মুসলিমরা এমনই হয় তাদের ঈমানের শক্তির বলে একাই ১০০০ জনের সামনে দাড়াতে সক্ষম, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রিয় বোন কে হেফাজত করুন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন