শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

৩০ বছর ধরে জঙ্গলে বাস করেন সেং

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বিশ্বের সর্বাধুনিক নগরীর অন্যতম সিঙ্গাপুর, যেখানে আকাশচুম্বী ভবন আর বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের অভাব নেই। কিন্তু একজন মানুষের স্থান হয়নি সেখানে। ৩০ বছর ধরে তিনি বাস করেছেন জঙ্গলে। সেখানেই তাঁবু খাটিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন কোনোমতে। ৭৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম ওহ গো সেং। বয়স অনেক হলেও তাকে দেখে মনে হবে মধ্যবয়সী, তার জ্বলজ্বলে চোখ প্রথম দেখাতেই যে কারও মন কাড়বে। চলতি মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুরের জঙ্গলে সেং এর বসবাসের কাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনা জানতে পেরে অনেকেই হতভম্ব হয়েছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তাকে কেনও আরও সহায়তা দেওয়া হল না? আবার অনেকে এই ৩০ বছর ধরে সবার অলক্ষ্যে এমন জীবনযাপন সেং কীভাবে করতে পেরেছেন তা জানতে কৌতূহলী হয়েছেন। সেং এর এই জীবনকাহিনী সবিস্তারে তুলে ধরে প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। ঘটনার সূত্রপাত বড়দিনে। সেদিন রাস্তায় সবজি বিক্রি করছিলেন ওহ গো সেং। তাকে বাধা দেয় পুলিশ। কারণ, লাইসেন্স ছাড়াই তিনি ব্যবসা করছিলেন। শাক-সবজি এবং মরিচ উৎপাদন করে বিক্রি করেন তিনি। আগে মার্কেটে তার ছিল ফুল বিক্রির ব্যবসা। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তিনি সেই কাজ হারান। এরপরই সবুজ শাক-সবজি বিক্রি শুরু করেন। সেং এর ধারণা, পণ্যের দরদাম করা নিয়ে এক কাস্টমারের সঙ্গে তার বিরোধের জেরে সেই কাস্টমারই পুলিশের কাছে তার নামে নালিশ করেছে। এরপরই পুলিশ এসে তাকে বাধা দেয়। সে সময় ভিভিয়ান প্যান নামের এক দাতব্য কর্মী পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান, পুলিশের সঙ্গে সেং-এর কথোপকথন চলছে। এক পর্যায়ে পুলিশ সেং-এর শাক-সবজি জব্দ করে। ভিভিয়েন প্যান বলেন, সেং-এর এই দশা দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সেং খালি হাতে বাসায় ফিরুক তা চাননি ভিভিয়েন। তবে তিনি বলেন, “আমি এও বুঝতে পারছিলাম যে, আইন অনুযায়ী তারা রাস্তার ওপর এগুলো বিক্রি করতে পারে না।” তারপরও ভিভিয়ান ঘটনাটি ভিডিও করে ফেইসবুকে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। সেং এর দুর্দশার বিষয়টি পার্লামেন্টের স্থানীয় এক এমপি লিয়াং ইং হোয়া’র দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি দেখতে পান, ওহ গো সেং-এর আরও অজানা কাহিনী আছে। তা হল, তিনি ৩০ বছর ধরে বনে বাস করছেন। বিষয়টি কেউ জানে না। স্থানীয় কামপং বা গ্রাম সুঙ্গেই টেনগাহ’তে পরিবারের সঙ্গে বড় হয়েছেন ওহ গো সেং। কিন্তু ১৯৮০র দশকে গ্রামটিতে নতুন বহুতল নির্মাণের জন্য তা অধিগ্রহণ করা হয়। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সব অধিবাসীকে নতুন বাড়ি দেওয়া হবে। কিন্তু সেং নিজের জন্য একটি বাড়ি নিশ্চিত করে নিতে পারেননি। যদিও তার ভাই সরকারি একটি ফ্লাট পেয়েছিলেন এবং সেং কে তার সঙ্গে বাস করতেও বলেছিলেন। কিন্তু সেং সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। অন্যের পরিবারের বোঝা হতে চান না বলে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তিনি। এরপর সেং তার আদি বাড়ি যেখানে ছিল সেখানকার একটি বনের কাছাকাছি চলে যান। সেখানেই কাঠ, বাঁশ আর তেরপল দিয়ে অস্থায়ী আবাস গড়ে থাকতে শুরু করেন। বাগানে চাষাবাদ করে খাবার জোগাড় করেন সেং। আর তার আবাসের বাইরে দরজার পাশে গেলেই দেখা যায় রান্নার ছাই। জিনিসপত্র সব তেরপলের সেই ঘেরা জায়গার মাঝখানে স্তূপ করে রাখা। তার পেছনেই ঘুমানোর জায়গা। বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন