পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কো সফরে যাচ্ছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিতে তার এই সফর। শীতল যুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া যখন ইউক্রেন নিয়ে চরম মতবিরোধে মুখোমুখি অবস্থানে ঠিক এমন একটি সময়ে ইমরান খানের এই সফর।–ইয়ন, ডন
কূটনীতি ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে, যদিও ইউরোপ (মার্কিন শিবির) এবং পূর্ব ইউরোপ (রাশিয়ান শিবির) যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এমনই একটি অপ্রীতিকর সময়ে রাশিয়া সফর করবেন। ইউক্রেনের বর্তমান সংকটের কারণে বহির্বিশ্ব বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সফর ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ভারত অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সফরকে অনুসরণ করবে। কারণ, নয়াদিল্লির মস্কোর সাথে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি এসেছে, রাশিয়াও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত যখন নিজেকে শক্তিশালী করতে মার্কিন শিবিরে যোগ দেয় এবং চীনের জনগণের মুক্তি বাহিনীর (পিএলএ) সাথে মিলিত হওয়ার জন্য চেষ্টিত, ঠিক তখন পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিখেলাতে ভারসাম্য আনতে রাশিয়ান ফেডারেশনের কাছাকাছি চলে যায় বলে মনে হচ্ছে।
মস্কোর একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ইসলামাবাদে পাকিস্তান গ্যাসস্ট্রিম প্রকল্পের সাথে টোল-ফ্রি কার্যক্রম এবং কর ছাড়ের বিষয়ে আলোচনার জন্য এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বে আসন্ন সফরের সময় রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তান বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়। আরেকটি প্রকল্প যা এজেন্ডায় থাকতে পারে, তাহল কাজাখস্তান থেকে গ্যাস পাইপ লাইন।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আরেকটি ছিল, রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক সংশোধন করা। শীতল যুদ্ধের শত্রুতার কারণে রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের ভাল সম্পর্ক ছিল না। রাশিয়াও অতীতকে কবর দিতে এবং ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবেলায় তার দীর্ঘমেয়াদী মিত্র হিসেবে পাকিস্তানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকছে। প্রকৃতপক্ষে প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছিল।কারণ, ২০১২ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসলামাবাদ সফরে সম্মত হন।কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সফরটি হয়নি। তা সত্ত্বেও, সম্প্রীতির প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল এবং উভয়পক্ষ নীরবে তাদের সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য কাজ করেছে। ২০১৬ সালে রাশিয়া ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনার জন্য সৈন্যদের একটি দল পাঠায়। বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে তার সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর নয়াদিল্লি মস্কোকে পাকিস্তানের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া না করতে বললেও রাশিয়া ভারতীয় পরামর্শ উপেক্ষা করে। তারপর থেকে যৌথ সামরিক মহড়া দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত চলতে থাকে।
আফগানিস্তানের দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থল ইস্যু। ‘আফগান জিহাদের’ সময় উভয় দেশই বিপরীত শিবিরে ছিল কিন্তু এখন তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সামনের পথে এগিয়ে নিতে একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তান ও রাশিয়ার অভিন্নতার কারণ হল, তারা জানে যে আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানের দিকে নিয়ে যাবে, যা উভয় দেশের পাশাপাশি অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আসন্ন সফর তাদের তিক্ত অতীতকে কবর দিতে এবং সহযোগিতার একটি নতুন যুগে প্রবেশের জন্য উভয় পক্ষের চলমান প্রচেষ্টার অংশ। পাকিস্তান আশা করছে প্রেসিডেন্ট পুতিন চলতি বছরের কোনো এক সময়ে ইসলামাবাদে আসবেন। আসলে তা কৌশলগত অংশীদারদের প্রতিপক্ষের প্রকাশ্য ও গোপন প্রচেষ্টার পরিসমাপ্তি ঘটাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন