ইউক্রেন ইস্যুতে পূর্ব ও পশ্চিমের বিরোধ নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার রাশিয়ার আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দেশের বাইরে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জবাব দিয়েছেন। উভয় নেতাই ইঙ্গিত দিয়েছেন সামনে আরও সংঘাত হতে পারে। ইউক্রেনের তিন পাশে জড়ো করা দেড় লাখ সেনা এখনও সরানোর নির্দেশ দেননি পুতিন। অন্যদিকে বাইডেন রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। তবে তিনি বলেছেন, পূর্ণ আগ্রাসন শুরু হলেই নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে। হোয়াইট হাউজে বাইডেন বলেন, ক্রেমলিন আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেছে। তিনি এটাকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের শুরু হিসেবে অভিহিত করে। পুতিন আরও আগালে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। আগ্রাসনের হুমকির কূটনৈতিক সমাধান নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন কর্মকর্তারা আশার কথা শুনিয়ে আসলেও ক্রমে তা ক্ষীণ হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার জেনেভায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তিনি বলেছেন, এটি আর গঠনমূলক হবে না আর রাশিয়ার পদক্ষেপে ইঙ্গিত মিলেছে যে, মস্কো সঙ্কট সমাধানের শান্তিপূর্ণ উপায়কে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। মস্কোর ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা এখনই আরোপ না করলেও বাল্টিক অঞ্চলে অতিরিক্ত মার্কিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও এই সেনা মোতায়েনকে তিনি প্রকৃতপক্ষে ‘আত্মরক্ষামূলক’ বলে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় আটশ’ পদাতিক সেনা এবং ৪০টি এটাক এয়ারক্রাফট পাঠাচ্ছে। এছাড়া এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের কন্টিনজেন্ট এবং এএইচ-৬৪ অ্যাপাটি হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার রুশ পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের সদস্যরা সর্ব সম্মতভাবে দেশের বাইরে পুতিনকে সেনাবাহিনী ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মোতায়েন করা যাবে। এসব এলাকায় গত আট বছরের সংঘাতে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বিদেশে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন পাওয়ার পর ইউক্রেন সঙ্কট নিরসনে তিনটি শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, কিয়েভ যদি ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেয় তাহলে সঙ্কট সমাধান হতে পারে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এছাড়া পুতিনের বাকি দুই শর্ত হলো- ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আশা বাদ দেওয়া এবং আংশিকভাবে নিরস্ত্রীকরণ হয়ে যাওয়া। তবে পশ্চিমারা দাবি করে আসছে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ইউক্রেনকে স্থায়ীভাবে ন্যাটো জোটের বাইরে রাখার কথাও অস্বীকার করে আসছে তারা। ইউক্রেনে রুশ সেনা পাঠানো হবে কিনা এবং পাঠালে তারা কত দূর যেতে পারে জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘আমি বলিনি এই মুহূর্তে সেনারা সেখানে যাবে’। তিনি আরও বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ধরণ আগে অনুমান করা অসম্ভব-এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে, মাঠের পরিস্থিতিই এটা নির্ধারণ করে।’ এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন