এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা! বিষে মজুত মারণাস্ত্রকে অকেজো করতে এই পথেই হাঁটছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। বিষের চরিত্র বুঝে এমন এক ট্যাবলেট তৈরি করা হয়েছে যা সর্পদংশনকারীর প্রাণনাশের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে। অন্তত এমনটাই দাবি চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের। তাদের বক্তব্য, সর্প দংশনের পর রোগীকে দ্রুত এই ওষুধ খাইয়ে দিলে বিষক্রিয়ায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার সম্ভাবনা কমতে শুরু করবে। চিকিৎসার জন্য মিলবে বাড়তি সময়। এমনই ‘ওয়ান্ডার ড্রাগ’-এর ট্রায়াল শুরু কলকাতা, পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নেতৃত্বে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ। অ্যান্টিভেনাম থাকার পরেও কেন প্রয়োজন ট্যাবলেটের? বাংলার ঝোপঝাড়ে চার সাপের প্রভাব মারাত্মক। কেউটে, কালাচ, গোখরো ও চন্দ্রবোড়ার মতো বিষধরের কামড়ে মৃত্যু গা সওয়া। সময়মতো অ্যান্টিভেনাম দিয়েও বাঁচানো যায় না আক্রান্তদের। সর্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুর নিশ্চিত হানার নেপথ্যে সাপের বিষের চরিত্র। যা কিনা বদলে যায় এলাকা অনুযায়ী। যে কারণে স্থানীয় সাপের বিষ সংগ্রহ করে অ্যান্টিভেনাম তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তারই মধ্যে এই ট্যাবলেটের ট্রায়াল। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, ট্যাবলেটে রয়েছে মেটাজিনসিন গ্রুপের মেটালোপ্রোটিনেজ ইনহিবিটর, যা জিঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায় সাপের বিষ অথবা ভেনামে মজুত মেটালোপ্রোটিনেজ এনজাইমকে শরীরে কাজ করতে দেয় না। এই ধরনের ওষুধ হল ব্যাটিমাস্টেট ও মারিমাস্টেট। এছাড়া, ভারেসপ্লাডির মতো ইনডোল যৌগ ভেনামের ফসফোলাইপেজকে এরাকিডনিক অ্যাসিড সৃষ্টিতে বাধা দেয়। ফলে শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যানডিন, লিউকোট্রাইনের মতো প্রদাহ সৃষ্টিকারী যৌগ তৈরি হতে পারে না। এর জেরে শরীরে কিছুটা হলেও বিষের তীব্র ক্ষতিকর পরিণতি থেকে রেহাই মেলে। নয়া এই ওষুধের নাম ভারেসপ্লাডিব। ইতিমধ্যেই এই ওষুধের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একদল বিশেষজ্ঞের দাবি, এই ওষুধ সর্পরোগ চিকিৎসার প্রোটোকল বিরোধী। কারণ, জাতীয় প্রোটোকল অনুযায়ী সর্পদংশনের পর রোগীকে দ্রুত এভিএস দিতে হয়। সাপে কাটার ‘হান্ড্রেড রুল’ অনুযায়ী ১০০ মিনিটের মধ্যে। কিন্তু এই ট্যাবলেট দিতে হবে এভিএস দেওয়ার আগে। টাইমস নাউ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন