ওয়াহাবিদের জন্য দ্বিগুণভাবে চ‚ড়ান্ত আঘাত এসেছিল, যখন তাদের সউদী সমর্থকরা তাদের সমর্থন করা বন্ধ করে দেয় এবং যখন ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর উত্থান ওয়াহাবিবাদ এবং চরমপন্থার ওপর বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এমবিএস জনসমক্ষে ওয়াহাবিবাদ সম্পর্কে কথা বলার কয়েক বছর আগে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ একজন সউদী শাসকের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় টেলিভিশনে এসেছিলেন, শীর্ষ ওয়াহাবি নেতাদের বসেছিলেন এবং তাদের তিরস্কার করেছিলেন।
তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা এবং নীরবতা দেখতে পাচ্ছি।’
উপসাগরীয় অঞ্চলে, এ ধরনের কোনো মতবিরোধ বা বিবৃতি সাধারণত বন্ধ দরজার পিছনে করা হয়ে থাকে। নতুন হুমকিগুলোর বিরুদ্ধে ওয়াহাবিদের সংঘবদ্ধ হওয়ার অক্ষমতা সম্পর্কে তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের এ কড়া মন্তব্যটি সউদী আরবের অত্যন্ত সম্মানিত এবং শক্তিশালী ধর্মীয় সংস্থার জন্য অবমাননাকর ছিল, যা আইএস-এর বিরুদ্ধে ওয়াহাবিদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে সৃষ্ট তার হতাশাকে প্রতিফলিত করে। কারণ আইএস নেতাদের অনেকে ওয়াহাবিদের হাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা ব্যাপকভাবে ওয়াহাবি মতবাদ ধার নিয়েছে। আইএস ঐতিহাসিক খিলাফতের ঘোষণা দেয় এবং মক্কা ও মদিনায় বিস্তৃত হওয়ার প্রতিশ্রæতি দেওয়ার পর ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন অংশ দখল করে নেয়।
একদিকে উদারপন্থী এবং অন্যদিকে আইএসকে মোকাবেলা করার দ্বৈত চাপটি ওয়াহাবিবাদকে বিভ্রান্ত করে দেয় এবং এর ফলে দেশে এবং আঞ্চলিকভাবে নতুন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে ওয়াহাবিদের পদচারণা কঠিন করে যায়। বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের বিরল মন্তব্যের আট বছর পর তার সেই নেতিবাচকতাকে আরো অনেক এগিয়ে নিয়ে যান এমবিএস। তিনি গত বছর রোজায় যখন পরিবারগুলো টেলিভিশনের চারপাশে জড়ো হতো, তখন একটি বিস্তৃত টিভি সাক্ষাৎকারে ওয়াহাবিজমের বিরুদ্ধে স্পষ্ট মন্তব্য করেন। তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে বলেন, ‘সউদী আরব মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের শিক্ষায় আবদ্ধ নয়।’
শুধুমাত্র এমবিএস’র সাক্ষাতকারে দেয়াই নয়, এমনকি তার সাক্ষাৎকারকারী হিসেবে আবদুল্লাহ আল মুদাইফারকে নির্বাচন করার বিষয়টিও ছিল উল্লেখযোগ্য। কারণ মুদাইফার প্রাক্তন চরমপন্থী বা কট্টর আলেমদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামতে সহনশীলতা এনেছেন। বিন সালমান বলেছিলেন যে, ওয়াহাবিবাদের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া একজন মানুষকে পূজা করার সমান, যা প্রতিষ্ঠাতা শেখের প্রণীত শিক্ষা বিরুদ্ধ। সাক্ষাৎকারকারীর প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তরটি ওয়াহাবি ভিত্তিমূলের প্রতি কঠোর আঘাত এবং অভিশাপ, ‘যখন আমরা একটি নির্দিষ্ট স্কুল বা পন্ডিততকে অনুসরণ করার জন্য নিজেদের প্রতিশ্রæতিবদ্ধ করি, এর অর্থ আমরা মানুষকে আরাধ্য দেবতা বানাচ্ছি।’ (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন