গত মাসেই দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের ফল বেরিয়েছে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে রাফিয়া পাশ করেছিল ৯৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে। বাবা নাজির আহমেদ টিন্ডা স্বপ্ন দেখছিলেন ছোট মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন। দারিদ্র সত্ত্বেও মেয়ের লেখাপড়ার জন্য যথাসাধ্য খরচের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে আসা একটা ফোনে সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে গিয়েছে নাজির পরিবারের।
রোববার শ্রীনগরের ব্যস্ত বাজারে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন বছর উনিশের রাফিয়া নাজির। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করেও বাঁচানো যায়নি। শ্রীনগরের এসএমএইচএস হাসপাতালে সোমবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তার। হজরতবালের নাজিরদের দু’কামরার ছোট্ট বাড়িতে ভিড় উপচে পড়ছে। রাফিয়ার বাবা নাজির আহমেদের কার্পেটের ব্যবসা। মোদি সরকারের দমন-পীড়ন ও মহামারিতে বিধ্বস্ত উপত্যকায় ব্যবসা তত ভাল চলে না। সংসার চালাতে দোকানে কাজ করেন রাফিয়ার এক বড় ভাই, সুহেল হুসেন। তার আরও এক বড় ভাই ও বোন রয়েছেন।
রোববার মা ফাহমিদা বেগম ও বড় বোন ফারহানা নাজিরের সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন রাফিয়া। আচমকা বোমা বিস্ফোরণে আহত হন তিন জনেই। কিন্তু রাফিয়ার আঘাত ছিল সবচেয়ে গুরুতর। তার মা ও বড় বোনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ছোট বোনের মৃত্যুতে ফারহানা শুধু বলেন, ‘বোনের থেকেও বেশি ও আমার প্রিয় বন্ধু ছিল।’ হামলার ঘটনা ধরা পড়েছে বাজারের সিসি ক্যামেরায়। এখনও পর্যন্ত কোনও কেউ দায় স্বীকার করেনি। ওই দিনই ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন মোহাম্মদ আসলাম নামে এক বয়স্ক ব্যক্তি।
রাফিয়ার বড় ভাই সুহেল বলেন, ‘রাফিয়া যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হতে পারে, তার জন্য আমার পরিবার সব রকমের চেষ্টা করছিল। আমি নিজে দোকানে কাজ করতাম। চাইতাম সব রকম ভাবে ওকে সাহায্য করতে। আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল ওর উপরে।’ নাজির আহমেদও বললেন, ‘খুব বুদ্ধিমতি আর পরিশ্রমী মেয়ে ছিল। আমার সব স্বপ্ন ছারখার হয়ে গেল। কেন যে ওকে আমাদের থেকে ঈশ্বর ছিনিয়ে নিলেন!’ সূত্র: দ্য কুইন্ট, রাইজিং কাশ্মীর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন