ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে মূল্যস্ফীতির পারদ। পাশাপাশি কোভিডজনিত লকডাউন আরোপ করা হয়েছে চীনে। সব মিলিয়ে এটি বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ এক ধাক্কা। বিশেষ করে চীনে প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ বিশ্বের উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই দেশটিতে অবস্থিত। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোও এ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়া শিখে গেছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে জিরো কোভিড নীতির প্রভাব খুব বেশি হবে না বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা। খবর বিবিসি। কোভিড সংক্রমণ বাড়ায় গত সপ্তাহের শুরুতে শেনজেনে ছয়দিনের লকডাউন আরোপ করে চীন। দেশটির অনলাইন রিটেইলারদের অর্ধেকই এ শহরকেন্দ্রিক। এজন্য ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষের শহরটিতে লকডাউন বিশ্ববাণিজ্য নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে। সম্প্রতি এ নিষেধাজ্ঞা সাংহাই, জিলিন ও গুয়াংজুর মতো অন্যান্য বড় শহর ও প্রদেশে প্রসারিত হয়েছে। কারখানাগুলোকে উৎপাদন স্থগিত করতে হয়েছে এবং প্রদেশগুলো ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি চীনা বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে মালবাহী জাহাজের চলাচল পর্যবেক্ষণ করা প্রজেক্ট৪৪ অনুসারে, বিধিনিষেধে কার্যক্রম ধীর হয়ে যাওয়ায় চীনা বন্দরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম কমপেইন বলেন, চীনের ইয়ানতিয়ান বন্দরের বাইরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার জন্য প্রধান রফতানি বন্দর। গত বছর কোভিডজনিত বিধিনিষেধে শেনজেনের এ বন্দর বন্ধ করা হয়েছিল। ফলে বড়দিনের উৎসব মৌসুমে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো পণ্য সরবরাহ পায়নি। নতুন বিধিনিষেধ এমন সময়ে ঘোষণা করা হচ্ছে, যখন চান্দ্র নববর্ষের ছুটির পর দেশটির উৎপাদন খাত পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছিল। তবে আশার কথা হলো, চীনের জিরো কোভিড নীতি খুব কঠোর হলেও বেশির ভাগ লকডাউন বেশি দিন স্থায়ী হয় না। ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স চায়নার ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভেন লিঞ্চ বলেন, এটি দুপাশেই ধারালো তলোয়ারের মতো। চীন হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ করে দেয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশাল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোও এবার অনেক বেশি প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। আমরা আগেও দেখেছি, এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাগুলো শক্তিশালী সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে পেরেছে। যেমন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ওমিক্রন সংক্রমণের সময় সহজেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। সুতরাং এবার সংস্থাটি আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অ্যামাজনের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, এ অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোয় থাকা গুদামগুলো ব্যবহার করে আমরা এ ধরনের স্থবিরতা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আরেকটি উদাহরণ হলো ফক্সকন। সংস্থাটি অ্যাপলের জন্য আইফোন তৈরি করে। সংস্থাটি কর্মীদের বায়ো-বাবলের মধ্যে রেখে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটি এ ধরনের সুযোগ থাকা কারখানায় অন্যান্য কারখানার উৎপাদন স্থানান্তর করে। হ্যাং সেং ব্যাংক চায়নার প্রধান অর্থনীতিবিদ ড্যান ওয়াং বলেন, ফক্সকনের জন্য এটি সম্ভবত সহজ। তবে অনেক উৎপাদকের জন্যই এভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সহজ নয়। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামালের জন্য অন্যান্য চালানের ওপর নির্ভর করতে হয়। আর সবগুলো এ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় কাঁচামালের সরবরাহ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন তার জিরো কোভিড নীতিতে অটল থাকবে। তবে দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জোর দিয়েছিলেন, মহামারীসংক্রান্ত ব্যবস্থাগুলো অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণ হওয়া উচিত নয়। তবে দেশটি এ নীতি নিয়ে চলতে থাকলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এবং বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে। এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান দেশটিতে উৎপাদন কার্যক্রম স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম কনটেইনার পরিবহন প্লাটফর্ম হাউলিওর প্রধান নির্বাহী আলভিন ইয়া বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা ও সম্পদে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা ঠিক না। আমরা দেখতে পাচ্ছি ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কারখানাগুলোয় ক্রয়াদেশ বাড়ছে। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন