ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে আগাম কিছু বলা কঠিন। ১৯ শতকে যখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশমুখী সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে, তারপর তার মতো কেউ এ রকম ক্ষমতাধর আসনে আসীন হননি। তার পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তার অবস্থানও তাই আগাম অনুমান করা কঠিন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার স্ববিরোধী কথা বলেছেন এবং অবস্থান ও স্বর বদলেছেন। তারপরও গত বছরে অল্প যে ক’টি বিষয়ে যেসব কথা তিনি বারবার বলেছেন, তা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর তার আমলের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে অনুমান করা যেতে পারে।
এই নির্বাচনের ফলে সবচেয়ে বেশি ভুগবে সিরিয়ার মানুষ। সিরিয়ার সম্ভাব্য শরণার্থীদের মুখের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দরজা দড়াম করে বন্ধ হতে পারে। তবে সিরীয় খ্রিস্টানদের বেলায় এর ব্যতিক্রম হতে পারে। কেননা, ট্রাম্পের সিরীয় শরণার্থীবিরোধিতা ঘুরপাক খেয়েছে ইসলামবিদ্বেষের চারপাশে।
সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের আগমন ঠেকাতে ট্রাম্পের পরামর্শ হলো ওই দেশটির মধ্যেই ‘নিরাপদ অঞ্চল’ সৃষ্টি করা, যাতে সিরীয় উদ্বাস্তুদের শরণার্থী হিসেবে দেশের বাইরে যেতে না দিয়ে ওই এলাকার মধ্যে জড়ো করা যায়। দম্ভের সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, এর খরচ তিনি উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে আদায় করবেন। একই রকমভাবে মেক্সিকো আর আমেরিকার মধ্যে দেয়াল তৈরির খরচও মেক্সিকোর কাছ থেকেই নিয়ে ছাড়বেন বলে জানিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ত, রুশ স্বার্থকে আমলে নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের নতুন নীতির সূচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে এর অর্থ হলো সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকাকে ইতিবাচক এবং বাশার আল-আসাদের সরকারকে মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নেওয়া। যৌক্তিকভাবে এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রকে তার সনাতন মিত্রদের বলতে হবে তারা যাতে সিরিয়ার সশস্ত্রবিরোধীদের সাহায্য করা বন্ধ করে। ওয়াশিংটন তখন মস্কোর সঙ্গে মিলে সিরীয় ‘কোয়ালিশন সরকার’কে মদদ দেবে। এ ধরনের কোনো সরকার গঠিত হলে তার মধ্যে ‘সমঝোতাকামী’ বিরোধী সদস্যদেরও রাখতে রাজি ট্রাম্প। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার পথ খুলে যেতে পারে।
পুতিনের মতোই ট্রাম্পও ক্ষমতার মঞ্চে ‘শক্তিমান ব্যক্তিদের’ পছন্দ করেন। এই নীতির আলোকে তিনি হয়তো মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে চাইবেন। তিনি হয়তো এই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে মৈত্রী বাড়িয়ে তাদের দিয়ে যৌথভাবে ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলা করানোর চিন্তা করবেন। আর এই তিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে মিল এখানেই, তারা যার যার দেশের সন্ত্রাসবাদ নিয়েই চিন্তিত।
ট্রাম্প যেহেতু ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের করা পরমাণু সমঝোতা চুক্তির বিপক্ষে, তাই ইরানের বিপক্ষে তিনি সউদী আরবকে উসকে দেবেন। চাইবেন তুরস্ক, কায়রো ও রিয়াদকে নিয়ে সুন্নি ত্রিভুজ সৃষ্টি করতে। আর এর পৃষ্ঠপোষকতা করবে ওয়াশিংটন। আর এখানেই নিহিত আছে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির অসংগতি। (বৈশ্বিক স্তরে এই অসংগতির আরেকটা উদাহরণ হলো চীনের ব্যাপারে তার বিদ্বেষ।) মধ্যপ্রাচ্যকে ইরানবিরোধী করে তোলার আগে তাকে তো রাশিয়া ও সিরিয়াকে তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থেকে সরাতে হবে!
শেষতঃ অন্য যে আঞ্চলিক ‘শক্তিমান’ নেতার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ব্যাপক ঘনিষ্ঠ হবে, তিনি হলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এভাবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আরেক সরাসরি শিকার হবে ফিলিস্তিনি জনগণ। ওয়াশিংটন তখন নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিন বিষয়ে কোনো কিছু করার বেলায় আরও ছাড় দেবে; ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের পর অ্যারিয়েল শ্যারন ছাড়া অন্য কোনো ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এমন ছাড় আর ভোগ করেননি। -সূত্র : আল-জাজিরা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন