মানুষের জিন বিন্যাসের ৯২ শতাংশ উন্মোচন করে সেই ২০০৩ সালে ইতিহাস গড়েছিল হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট। কিন্তু বাকি ৮ শতাংশের বিশ্লেষণ করতে বিজ্ঞানীদের রীতিমত গলদঘর্ম হতে হয়েছে। প্রায় দুই দশক পর টেলিমোর টু টেলিমোর (টি২টি) কনসোর্টিয়ামের প্রায় ১০০ জন বিজ্ঞানীর একটি দল প্রথমবারের মত মানব জিনের পূর্ণাঙ্গ বিন্যাস উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। গবেষক দলের প্রধান, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওয়ার্ড হিউস মেডিকেল ইনস্টিটিউটের ইভান ইচলার বৃহস্পতিবার এই যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, “সম্পূর্ণ এই তথ্য উন্মোচনের ফলে এখন আমরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারব, কীভাবে মানুষ একটি আলাদা প্রাণীসত্তা হিসেবে অস্তিত্বমান; কেবল অন্য মানুষ থেকে নয়, কীভাবে আমরা অন্য জীব থেকেও আলাদা।” সিএনএন লিখেছে, সম্পূর্ণ এই জিনোম সিকোয়েন্স দেখাবে, কীভাবে একজন মানুষের ডিএনএ অন্যজন থেকে ভিন্ন হয় এবং এই জেনেটিক বৈচিত্র্য রোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে কিনা। তবে নতুন উন্মোচিত ওই জিন বিন্যাসে কোন প্রাণসূত্র লুকিয়ে আছে, এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে তা ছিল অজানা। গবেষক দলের নেতা ইচলার বলেন, “দেখা যাচ্ছে, এই জিনগুলো অভিযোজনের জন্য দারুণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে এমন জিন আছে, যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করে। এসব জিনের কল্যাণেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জীবাণু ও ভাইরাসের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে পারি আমরা। এমন জিন রয়েছে... যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা আগেই বুঝতে সাহায্য করবে এসব জিন।” তিনি জানান, সর্বেশষ উন্মোচিত বিন্যাসে কিছু জিন রয়েছে, যেগুলোর কারণে মানুষের মগজ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চেয়ে আকারে অনেক বড় হয়েছে। আর এ বিষয়টিই মানুষকে অনন্য করে তুলেছে। মানব জিনোমের এই বাকি ৮ শতাংশ উন্মোচনের কাজটি বছরের পর বছর ধরে থমকে ছিল মূলত ওই অংশের জটিলতার কারণে। এর একটি ডিএনএ অঞ্চলে বেশ কিছু পুনরাবৃত্তি ছিল, ফলে আগের ক্রম ধারায় সঠিক সারিতে ডিএনএ বিন্যাস করা কঠিন ছিল। গবেষকরা ডিএনএ ক্রম সাজানোর ক্ষেত্রে গত দশকের দুটি পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেছেন। এর মধ্যে অক্সফোর্ড ন্যানপোর ডিএনএ সিকোয়েন্সিং প্রক্রিয়ায় একবারে ১০ লাখের বেশি ডিএনএ বর্ণ সাজানো যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু ভুলও হয়। আর প্যাকবায়ো হাইফাই ডিএনএ সিকোয়েন্সিং প্রক্রিয়ায় ২০ হাজার বর্ণ পাঠ করা যায়। এক্ষেত্রে সঠিক হওয়ার হার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত। দলের আরেক গবেষক, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক মাইকেল শ্যাটজ বলেছেন, প্রত্যেকের নিজস্ব জিনোম সিকোয়েন্স করে দেওয়া এখনও অনেক ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তবে নির্দিষ্ট জেনেটিক পার্থক্য নির্দিষ্ট ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত কিনা, তা শনাক্তে গবেষণা চলছে। জেনেটিক বৈচিত্র্যগুলো জানার ফলে চিকিৎসকরা আরও ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারবেন। তবে ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জিন তথ্য শাখার প্রধান অ্যাডাম ফিলিপ্পি বলছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে মেডিকেল টেস্টে ব্যক্তির জিনোম সিকোয়েন্স করা একটি রুটিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। খরচও পড়বে ১ হাজার ডলারের কম। তারা সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক চার্লস রোটিমি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সম্পূর্ণ জিন বিন্যাস উন্মোচনের এই সাফল্য আমাদের সমস্ত মানবতার জন্য স্বতন্ত্র ওষুধের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।” বিবিসি, সিএনএন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন