কঙ্গোর কাহুজি-বিয়েগা জাতীয় অরণ্যে বাস করেন শতাব্দীপ্রাচীন । কঙ্গোর সেনা তাদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার চালাচ্ছে বলে সম্প্রতি কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন রিপোর্টে জানিয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত তিনবছর ধরে ফের ওই জনগোষ্ঠীর উপর চূড়ান্ত অত্যাচার শুরু হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো এবং জঙ্গলের রেঞ্জাররা ওই জনগোষ্ঠীর মানুষদের লাগাতার ধর্ষণ করছে বলে অভিযোগ। গ্রামে ঢুকে তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে। জঙ্গলের অদূরে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বহু বাটওয়া জনজাতির মানুষ। তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হার হিম হয়ে যাওয়ার মতোই।
১৯৮০ সালে জার্মানির অনুদানে কাহুজি-বিয়োগা জঙ্গলটিকে জাতীয় অরণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গোরিলাদের মুক্তভূমি এই অরণ্য। এই জঙ্গলেই বহু শতাব্দী ধরে বসবাস করে বাটওয়া জনজাতি। অরণ্যবাসী এই জনজাতি জঙ্গল নষ্ট করেছে, এমন রিপোর্ট নেই। কিন্তু ১৯৮০ সালে ওই জঙ্গল জাতীয় অরণ্য ঘোষণা হওয়ার আগেই ১৯৭৬ সালে জঙ্গল থেকে প্রায় ছয় হাজার অরণ্যবাসীকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের খুন করা হয়, ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলি কথা বলেছিল কিবিবি কালোবার সঙ্গে। ৩০ বছরের কিবিবির পাঁচ সন্তান। জঙ্গলের গ্রামে থাকতেন। একদিন তিনি যখন মাঠে কাজ করছেন, শুনতে পেলেন আক্রমণ হয়েছে। বাড়ি পৌঁছে দেখেন, আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ছাই থেকে ধোঁয়া বার হচ্ছে। একটি লাঠি নিয়ে ছাইয়ের স্তূপ ঘাঁটতে শুরু করেন তিনি। ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে দুই সন্তানের মাথার খুলি। কঙ্গোর সেনা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে জীবন্ত মেরে ফেলেছিল দুই কোলের শিশুকে।
বাকি তিন সন্তানকে নিয়ে এখন ওই ক্যাম্পে বসবাস করছেন কিবিবি। জানিয়েছেন, সেখানে খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই। কিবিবির মতো আরো মানুষ বাস করছেন ওই ক্যাম্পে। তারা জানিয়েছেন, সেনা জঙ্গলে ঢুকে গ্রামের মানুষের হাত কেটে দেয় প্রথমে। তারপর তাদের হত্যা করা হয়। কাটা হাত দেখানো হয় সকলকে। যাতে কেউ আর গ্রামে না থাকে।
প্রশাসনের দাবি, ওই জঙ্গল জাতীয় অরণ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলেই তাকে মানুষমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে ধর্ষণ এবং খুনের কথা প্রশাসন স্বীকার করেনি। বরং তাদের দাবি, জঙ্গলের মানুষের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, বিকল্প যে ক্যাম্প তৈরি হয়েছে, তা বসবাসের অযোগ্য। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন