আবহাওয়া পরিবর্তন রোধে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উেসর ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বিভিন্ন দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। খবর এপি। জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল জার্মানি। ইউক্রেনে রুশ হামলার জের ধরে মস্কোর সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়েছে দেশটির। তাই রুশনির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি আবহাওয়া লক্ষ্য পূরণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। ৬০০ পাতাবিশিষ্ট ইস্টার প্যাকেজটি জার্মানির মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। প্যাকেজটির মাধ্যমে সমুদ্রতীর থেকে দূরবর্তী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছে জার্মান সরকার। ২০৩৫ সালের মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এ বিষয়ে জার্মানির অর্থ ও জ্বালানিমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক বলেন, এ প্যাকেজের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। জার্মান সরকার জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ৮ গিগাওয়াট থেকে ৩০ গিগাওয়াটে উন্নীত করবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে তা আরো বেড়ে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা দাঁড়াবে ৪০ গিগাওয়াট। ২০৪৫ সালের মধ্যে নিট জিরো লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটি। ওই সময়ের মধ্যে অফশোর বায়ুবিদ্যুৎ সক্ষমতা হবে ৭০ গিগাওয়াট। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে অফসোর বায়ুবিদ্যুৎ সক্ষমতা ১১৫ গিগাওয়াট করার পরিকল্পনা করছে জার্মান সরকার। বায়ুবিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যও নিয়েছে দেশটি। আগামী দশকের মধ্যে জার্মানির সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা চার গুণ বাড়িয়ে ২১৫ গিগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে জার্মানির অর্থ ও জ্বালনিমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক অতীতের ব্যর্থতার কারণে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নতুন পরিকল্পনাগুলোকে কোনো অন্তিম সমাধান না, বরং প্রাক-পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী মাসগুলোয় আরো কিছু ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেগুলো বাস্তবায়নের আগে সংসদের সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলো অনুমোদন করতে হবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ জার্মানির পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করবে। রুশ জ্বালানি আমদানি কমানোর কারণে স্বল্পমেয়াদি চাহিদা পূরণে দেশীয় কয়লা ব্যবহার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে রুশ কয়লা, জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়েছে জার্মান সরকার। এ বছরের মধ্যেই রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করার লক্ষ্য জার্মানির। পাশাপাশি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানিও বন্ধ করবে দেশটি। জার্মান শিল্প ও শিল্প সম্পর্কীয় পরিষেবা সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় সংস্থা বিডিআই সরকারের নতুন উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে জার্মান সরকারের নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এছাড়া বিডিআই জানায়, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি বাদে হাইড্রোজেন ও বায়োমাস জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে দেশটিকে। সম্প্রতি জার্মানির প্রতিবেশী রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৩০ কোটি ইউরো বা ৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার সমপরিমাণ ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। আলপাইন রাষ্ট্রটি রুশ গ্যাসের ওপর জার্মানির থেকেও বেশি নির্ভরশীল। অস্ট্রিয়ার পরিবেশমন্ত্রী লিওনোর গেওয়েসলার বলেন, প্রতিটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মুঠো থেকে আমাদের মুক্ত করে। এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন