বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কমছেই না যানজটের তীব্রতা

ছোট গাড়ি কেনা ও পরিবহণে নিরুৎসাহিত করা মানসম্পন্ন বাস চালুর ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের

একলাছ হক : | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

পহেলা বৈশাখ ও সাপ্তাহিক দুইদিনসহ টানা তিনদিন ছুটির পর গতকাল রাজধানীর সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। একদিকে রমজান, গরম, অন্যদিকে রাস্তায় বের হলে শব্দ দূষণ আর যানজটের কারণে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে যানজট শুরু হয়। ইফতারের আগে যানজটের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কেই শুধু নয়, অলি-গলিতেও ব্যাপক যানজট দেখা গেছে। প্রায় প্রতিদিন যানজটের যন্ত্রণায় ভুগছে রাজধানীবাসী। ঢাকায় বসবাসরত মানুষের অভিযোগ, রাস্তায় দিন-রাত যানজট লেগেই আছে। যানজট রোধে সরকারিভাবেও তেমন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে প্রতিদিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলছে। ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অফিস চলছে বিকেল চারটা পর্যন্ত। মূলত সাড়ে ৩টার পর অফিস শেষে সড়কে যানজটের তীব্রতা বেড়ে যায়। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করলেও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার কারণে অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। নগরবাসী বলছেন, অসহনীয় যানজট এখন রাজধানীতে, যানবাহন থেকে হাঁটার গতি বেশি।
এদিকে, যানজট নিরসনে রাজধানীর বাসরুট কমানোর পরামর্শ পরিবহন বিশেষজ্ঞদের। মানসম্পন্ন বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে রাজধানীর ৩শ’ বাসরুট ২১টিতে নামিয়ে আনলে অসহনীয় যানজট কমতে পারে। এক্ষেত্রে দিল্লির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এসব কার্যক্রম সরাসরি দেখভালে দুই সিটির অধীনে স্বতন্ত্র পরিবহন ইউনিট গঠনের পরামর্শও তাদের। সড়ক পরিবহন সচিব বলছেন, যানজট নিরসনে গণপরিবহণের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। যানজটের এমন ভয়াবহ অবস্থা এক সময় ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও ছিল। ৬৫৭টি বাস রুটকে ১৭টি ক্লাস্টারে ভাগ করায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে তাদের যানজট। এক্ষেত্রে দিল্লি পরিবহন কর্তৃপক্ষ সরকারি বাস বাড়িয়ে উদ্ধুদ্ধ করেছে বেসরকারি বাস মালিকদেরও। ছোট গাড়ি কেনা ও পরিবহণে নিরুৎসাহিত করতে রাজধানীতে মানসম্পন্ন বাস চালু ও বিনিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা বলছেন, ভালো মানের পরিবহন ব্যবস্থার জন্য বেঁচে থাকতে সাবেক মেয়র আনিসুল হক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার পরামর্শ ছিলো অল্প সুদে ঋণ নিয়ে কিছু ভালো মানের বাস কেনার। নগরবাসীকে স্বাচ্ছন্দে চলাচলের, কিন্তু তার মৃত্যুর পর সব স্থবির হয়ে গেছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর গুলিস্থান, নিউমার্কেট, আজিমপুর, শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্টের মোড়, পল্টন, কাকরাইল, আবুল হোটেল, রামপুরা, মালিবাগ, মহাখালী, নাবিস্কো, সাতরাস্তা, মগবাজার, এয়ারপোর্ট সড়ক, খিলক্ষেত, বনানী, বাড্ডা, কুড়িল, প্রগতি সরণি, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর রোড, বিজয় সরণি, শ্যামলী, মিরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মুনিরুল আলম বলেন, গত দুইদিন একটু ভালো ছিলাম। আবার রাজধানীর যানজট পুরোনো অবস্থায় ফিরে গেলো। একটি সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ালে ১ ঘণ্টা চলে যায়। কোন কোন জায়গায় এমনভাবে রিকশা জট লেগে থাকে তাতে করে কোন যানবাহনই চলতে পারে না। ভোগান্তি শুধু আমরা যারা এই নগরীতে বাস করছি তাদের।
সিএনজি অটোরিকশার চালক নয়ন বলেন, সব রাস্তায়ই যানজট। কোন রাস্তাতেই যানজটের জন্য যাত্রী নিয়ে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারি না। একটা ট্রিপ নিলেই দিন চলে যায়। এমন দুর্ভোগ আর সহ্য হয়না।
ফুলবাড়িয়ায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাবিবুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনের চেয়ে যানজট বেড়ে গেছে। রাস্তায় মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। রিকশা জট হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। মোটরসাইকেল ও ছোট গাড়িগুলো ট্রাফিক আইন মানতেই চায় না। বাসগুলো মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠায়। আমরা নিয়মিত আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপর হতে হবে। মানুষের যাতায়াতের জন্য মানসম্পন্ন বাসের মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে করে প্রাইভেটকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে যেন বাস ব্যবহার করতে পারে। যানজট কমাতে সড়কের পাশাপাশি নৌপথের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। রাজধানীর সকল পথের ফুটপাথ, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিস্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন