বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সামরিক বাহিনীর আকার কমিয়ে আনছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৫ এএম

ভারতের উত্তরের রাজ্য রাজস্থান থেকে ৫০ ঘণ্টা দৌড়ে রাজধানী দিল্লিতে একটি বিক্ষোভে যোগ দিতে পৌঁছেছেন ২৩ বছরের এক যুবক। এই বিক্ষোভ সেনা বাহিনীতে নিয়োগ চালু রাখার দাবিতে। জাতীয় পতাকা নিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বের ওই দৌড় শেষ করা সুরেশ ভিচার বিবিসিকে বলেছেন, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া তার স্বপ্ন, অথচ দুই বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ, তার মত আগ্রহীদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ভারতের সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেওয়া যায় ২১ বছর বয়স পর্যন্ত। এ বাহিনীর কর্মী সংখ্যা ১৪ লাখ। এই হিসাবে কেবল ভারতে নয়, পুরো বিশ্বেই অন্যতম শীর্ষ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের সেনাবাহিনী। অনেক ভারতীয়র কাছেই এটা কাক্সিক্ষত ও নিরাপদ চাকরি হিসেবে বিবেচিত। প্রতিবছর সেনাবাহিনী থেকে ৬০ হাজার কর্মী অবসরে যান এবং সেই জায়গা পূরণে প্রায় ১০০ বার নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হয়। কোভিড মহামারীর কারণে গত দুই বছর নতুন নিয়োগ বন্ধ ছিল বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ভাষ্য। তবে বিবিসি লিখেছে, কর্মকর্তাদের ওই বক্তব্যে হয়ত ‘পুরো সত্য নেই’। বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার হয়ত সামরিক বাহিনীর আকার কমিয়ে আনার পথ খুঁজছেন। এর অন্যতম কারণ সামরিক বাহিনীর কর্মীদের বেতন ও অবসরভাতার বিপুল অংক, যার পেছনে বাহিনীর মোট বাজেটের (৭ হাজার কোটি ডলার) অর্ধেকই খরচ হয়ে যায়। ফলে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সরঞ্জাম কেনার জন্য খুব বেশি অর্থ থাকে না। সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরই ভারতের অবস্থান। সেই সঙ্গে তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক মিসাইলের মজুদও বেশ সমৃদ্ধ। নরেন্দ্র মোদীর সরকার এখন দেশের ভেতরে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সেনা নিয়োগের একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে মোদী সরকার, যাকে বলা হচ্ছে ‘থ্রি ইয়ারস ট্যুর অব ডিউটি’। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেও সামরিক বাহিনীর সংস্কারের পক্ষে। শুধু সাহসী নয়, দ্রুত গতিসম্পন্ন, দ্রুত স্থানান্তরে সক্ষম ও প্রযুক্তি-নির্ভর বাহিনী গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে আসছেন তিনি। মোদীর ভাষায়, ভারতের দ্রুত যুদ্ধ জেতার সামর্থ্য দরকার, কারণ “দীর্ঘ সময় লড়াইয়ে থাকার বিলাসিতা করার সুযোগ আমরা পাবো না।” সামরিক বাহিনী আকার কমিয়ে আনার যৌক্তিকতা নিয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারও সম্প্রতি কথা বলেছেন। সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএস পানাঙয়ের ভাষায়, এক লাখ সেনার বিদ্যমান ঘাটতি বাহিনীতে সংস্কারের একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, “একুশ শতকের সামরিক বাহিনীর দ্রুত শত্রুর জবাব দেওয়ার এবং দ্রুত চলার সক্ষমতা থাকতে হবে, যার সঙ্গে থাকতে হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমারোহ, কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, পারমাণবিক অস্ত্র এখানে বড় আকারের প্রচলিত যুদ্ধের সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে।” এইচএস পানাঙয়ের ভাষায়, ভারতের সামরিক বাহিনী আকারে অনেক বড় এবং সংখ্যার জন্য সেখানে মানে ছাড় দিতে হচ্ছে। “উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় অনেক বেশি হারে বাড়ানো সম্ভব না এবং সে কারণেই একটি ছোট বাহিনী দরকার।” বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন