প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিদ্যুত রপ্তানির অপশন খুঁজে বের করা সত্ত্বেও ভারতের বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল নেপাল। সর্বশেষ ভারত থেকে রাতের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া বন্ধ হয়েছে। এর ফলে নেপালের সুনির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিল্প কলকারখানা। এতে করোনামহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, তা আরও প্রকট হচ্ছে। কেউ কেউ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য ধরার কারণে নেপাল ইলেকট্রিক অথরিটি (এনইএ) বিদ্যুত কিনতে সক্ষম হয়নি, বিশেষ করে রাতের জন্য। এ সময় ভারতেই বিদ্যুতের চাহিদা থাকে তীব্র। ফলে রপ্তানি করার জন্য বা প্রতিবেশীকে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ তাদের হাতে থাকে না। ফলে এ সময়টাতে নেপালে রাতের বেলা বিদ্যুতের বড় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে উদ্বৃত্ত বিদ্যুত রপ্তানি করার সুযোগ বেছে নিয়েছে নেপাল। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত) দেশটির যে পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন, তার অর্ধেকের বেশির জন্য নির্ভর করতে হয় ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের ওপর। এ সময়ে নেপালের নদীগুলোর পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এই নদী ব্যবহার করেই তারা উৎপাদন করে পানিবিদ্যুৎ। সেখানে যেসব পানিবিদ্যুৎ বিষয়ক প্রকল্প আছে তার বেশির ভাগই পরিচালিত হয় প্রবহমান নদীর ওপর ভিত্তি করে। এই পানির প্রবাহ চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টার্বাইনকে ঘোরায়। কিন্তু পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে সক্ষমতার মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়। এনইএ’র একজন মুখপাত্র সুরেশ ভট্টরাই বলেন, শুষ্ক মৌসুমে দিনের বেলা আমরা ভারত থেকে খুব সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ পাই। কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ রাতের বেলা তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতেই পারি না। এর কারণ, রাতের বেলা ভারতেই বিদ্যুতের ঘাটতি আছে। এ জন্য আমরা তাদের কাছ থেকে বিদ্যুত কিনতে পারি না। তার মতে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত ভারত থেকে নেপালে কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকেই না। মার্চের শেষের দিকে ভারত থেকে নেপালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয় রাতের বেলা। এ অবস্থা চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। উপরন্তু মধ্য ফেব্রুয়ারিতে তানাকপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত মূলে নেপালকে বিদ্যুৎ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। ওদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে কয়লার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। এ কারণে ভারত তার কয়লাচালিত বেশ কিছু বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলেও সঙ্কট গাঢ় হয়েছে। ভারতে বিদ্যুতের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ উৎপাদন হয় কয়লার ওপর ভিত্তি করে। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ভারতের অনেক রাজ্যে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মে গরমের কারণে ভারতের ভিতরেই বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এ সময়ে জনগণ তাদের বাসার এয়ারকন্ডিশন এবং বৈদ্যুতিক পাখা বেশি থেকে বেশি ব্যবহার করেন। গত সপ্তাহে রয়টার্সের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, নয় বছরের মধ্যে গ্রীষ্মকালে কয়লার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ জন্য অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে ভারত। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান হারে বিদ্যুতের ব্যবহার ৩৮ বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনইএ’র মতে, নেপালের আভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন প্রায় ৮৫০ মেগাওয়াট। তবে পিক-আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা পৌঁছে যায় ১৭০০ মেগাওয়াট। সুরেশ ভট্টরাই বলেন, ভারত থেকে যেহেতু আমরা অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারছি না, তাই সুনির্দিষ্ট শিল্প খাতগুলোতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। তা সত্ত্বেও সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আমরা দিনে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ দিয়ে যাচ্ছি। যখন বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হবো না, তখন আমরা সংশ্লিষ্ট কারখানাকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না রাখার পরামর্শ দেবো। মোরাং-সুনরাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোরে যেসব কারখানা পরিচালিত হচ্ছে সেখানে রাতের শেষের দিকে বিদ্যুতের সঙ্কট তীব্র। মোরাংয়ের চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সুয়েশ পাইকুরেল বলেছেন, গত কমপক্ষে ৫ দিন ধরে এই শিল্প এলাকায় ১২ ঘন্টা করে বিদ্যুত থাকছে না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বীর বাহাদুর দেউবা ভারত সফর করে ফেরার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছিল। কিন্তু আবারও আমাদের বিদ্যুত কমিয়ে দেয়া হচ্ছে অথবা দেয়া হচ্ছেই না। মার্চের শুরুতে ওই অঞ্চলের কারখানাগুলোতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দিনে বিদ্যুৎ থাকে না ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত। এ সঙ্কটের কারণেক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পগুলো তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। একই সঙ্কটে ভুগছে সিমেন্ট, প্লাস্টিক, লোহা, স্টিল ও সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো। কাঠমান্ডু পোস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন