শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

স্বাস্থ্যসম্মত শরবত ও পানি

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৯ এএম

শরবত রোজাদারের ইফতারের অন্যতম পানীয়। রোজাদারের দেহের সারাদিনের ঘাটতি দ্রুত পূরণে শরবত বিশেষ ভূমিকা রাখে। সারাদিন অনাহারে থাকার ফলে শরীরে পানি ও গ্লুকোজের অভাব হয়। এজন্য এ সময় চিনি বা গুড় বা ফলের শরবত পান করা প্রয়োজন। এতে দেহে দ্রুত পানির ঘাটতি পূরণ করে শক্তি দেবে। শরবতে রয়েছে খাদ্যশক্তি, গ্লুকোজ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। শরবত তৃষ্ণা মেটায়, পেট ঠাণ্ডা রাখে, খাদ্যদ্রব্য হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খাবার স্যালাইনের মতো দ্রুত শক্তি দেয়।

কোন্ শরবত স্বাস্থ্যসম্মত সেটাই প্রশ্ন। বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের যে রঙিন শরবত পাওয়া যায় তা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রঙিন শরবতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে। বাজারের ফলের জুসে ফলের রস নেই। আছে ফ্লেভার ও রাসায়নিক পদার্থ। চিনি, গুড়, লেবু ও পানি দিয়ে তৈরি শরবতই সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত। অনেকেরই প্রশ্ন চিনি ও গুড়ের মধ্যে কোনটি ভালো। পুষ্টিবিদ ও ভেষজবিদদের মতে, চিনির চেয়ে গুড় বেশি পুষ্টি ও ভেষজসমৃদ্ধ। আখের গুড় চিনির চেয়ে বেশি হজম হয়। গুড়ে আখের রসের সব খনিজ ও ক্ষারক পদার্থ সুরক্ষিত থাকে। তবে গুড়ে প্রচুর ময়লা থাকে। এই ময়লা পরিশোধন করতে পারলে গুড়ই উত্তম হতো। চিনি তৈরির সময় কিছু রাসায়নিক পদার্থ দেয়া হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আয়ুর্বেদ মতে, গুড় রক্তস্বল্পতা, জন্ডিস, পিত্তনাশ ও কোনো স্থানে ফুলে ওঠা দূর করে। গুড়ের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গুড়ে চিনির চেয়ে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস বেশি থাকে। অনেকেই আখের রস পুষ্টিসমৃদ্ধ মনে করে ইফতারে শরবত বেশি পান করেন। আখের রসের চেয়ে গুড় ও চিনিতে ১০ গুণ বেশি খাদ্যশক্তি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। এছাড়াও আখের রসে ময়লা থাকার সম্ভাবনা বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আখের গুড়, চিনি ও আখের রসে পুষ্টি থাকে যথাক্রমে খাদ্যশক্তি ৩৮৩, ৩৯৪ ও ৩৯ কিলোক্যালরি; শর্করা ৯.৫, ৯.৮ ও ৯.১ গ্রাম; ক্যালসিয়াম ৮০,২৮ ও ১০ মিলিগ্রাম; ফসফরাস ৪০, ৪ ও ১০ মিলিগ্রাম এবং আয়রন ১১.৪, ০.১ ও ১.১ মিলিগ্রাম। ধুলাবালু ও ময়লা পরিষ্কার করে তৈরি করতে পারলে আখের গুড়ের শরবতই স্বাস্থ্যসম্মত।

ইফতারি করার এক ঘণ্টা পর প্রচুর পানি পান করা সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত। তবে নিজেদের তৈরি টাটকা ফলের রসের শরবত উত্তম। রমযানে দূর হোক পানি শূন্যতা- জীবন ধারণের জন্য বায়ুর পরেই জরুরি হলো পানি। পানি মহান স্রষ্টার এক মহানিয়ামত। পানি ছাড়া জীবন অচল। পানি দেহের জন্য ভীষণ জরুরি। শুধু রমযান নয়, পুরো বছরে পান করুন প্রচুর পানি। পানি দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য আনে সুফল। আমাদের দেহের ভেতরে কোন দাঁত নাই। তাই খাবার ভালো ভাবে হজম হবার জন্য প্রতিদিন অন্তত দেড় - দ্ইু লিটার পানি পান করাটা যথেষ্ট দরকার। পানি খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে।

পানি আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য ভীষণ জরুরি। আমাদের দেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গের নাম হলো কিডনী। কিডনী দেহের ছাকন যন্ত্রের মতো কাজ করে। দেহের জরুরি উপাদানগুলোকে রেখে, অপ্রয়োজনীয় অংশগুলোকে মূত্রের সাহায্যে শরীরের বাহিরে বের করে দেয় কিডনী। এই অঙ্গ আমাদের দেহে রয়েছে পেটের দুই পাশে দুইটি। প্রচুর পানি খেলে কিডনী কাজ করে ভালোভাবে। তবে কিডনী নষ্ট হয়ে যাবার পরে, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত পানি খাওয়াটা অনুচিৎ। পানি অ্যাসিডিটির প্রধান ওষুধ- প্রচুর পানি খেলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের পরিমাণ কমে যায়। বুকে জ্বালা পোড়া, বমি বমি লাগা, টক ঢেকুর ওঠা, পেটে ব্যথা, বুকে আলপিনের মতো খোঁচানো ব্যথা, পিঠে ব্যথাও কমে যায়। খাবার সঠিক ভাবে হজম না হবার জন্য এমন হয়। পানি দেহের চর্বি কমায়- এই রমযানে তেলে ভাজা খাবার খাওয়া হয় বেশি। তাই এফতারের পর থেকে সেহরী পর্যন্ত পান করুন প্রচুর পানি। পানি দেহের ফ্যাট সেলগুলোকে কমিয়ে দেয়। ফলে ওজন কমাতে সুবিধা হয়। যারা প্রচুর খাবার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করে, ওজন কমাতে চায়, তাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পানি পান করা উচিৎ।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট।
মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন