শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

শ্রীলঙ্কায় আবারো জরুরি অবস্থা

সরকারবিরোধী ধর্মঘটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল বন্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সরকারবিরোধী ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে আবারও জরুরি অবস্থা জারি করেছেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন তিনি। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের চলা ধর্মঘটের কারণে দোকানপাট, গণপরিবহণ বন্ধ হয়ে গেছে। জনশৃংখলা নিশ্চিত করতেই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া জরুরি আইন প্রয়োগ করেছেন। শুক্রবার রাজধানী কলম্বো ছাড়াও অন্যান্য শহরে ধর্মঘটে নামে হাজার হাজার নাগরিক। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে গোটাবায়া সরকারকে দায়ী করে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী পার্লামেন্ট ভবন ঘেরাও করতে গেলে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে অসংখ্য স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন আন্দোলনকারীরা। গণপরিবহণ বন্ধে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। শুক্রবার জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হচ্ছে জরুরি অবস্থা। জরুরি অবস্থা চলাকালীন পুলিশ ছাড়াও সেনা মোতায়েন করা যায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে কাটাতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। আমদানিকৃত খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতিতে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে সরকারবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্যবহার করার মতো মাত্র ৫ কোটি মার্কিন ডলার রিজার্ভ আছে শ্রীলঙ্কার। এতেও পদত্যাগ করছেন না প্রেসিডেন্ট। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সর্বশেষ এ জরুরি অবস্থায় কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু এর আগের জরুরি অবস্থায় সামরিক বাহিনী মোতায়েন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই লোকজনকে গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়াসহ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি বাড়ানো হয়েছিল। এবার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই তার নিন্দা জানান দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত। গোটাবায়াকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সাজিথ বলেন, “সঙ্কটের সমাধান খোঁজার বদলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।” জরুরি অবস্থা জারির এ সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন কানাডার রাষ্ট্রদূত ডেভিড ম্যাককিনন। “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কাজুড়ে চলা বিক্ষোভে নাগরিকরা ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করছিল, এতে দেশের গণতান্ত্রিক ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হচ্ছিল।” এনডিটিভি জানিয়েছে, শুক্রবার একদল শিক্ষার্থী পার্লামেন্টে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ফের কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে। প্রেসিডেন্ট ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ দিন থেকে দেশটির সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মীদের শুরু করা ধর্মঘটে দ্বীপটি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার শ্রীলঙ্কাজুড়ে হাজার হাজার দোকান, স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কলম্বোর প্রধান রেলস্টেশন বন্ধ ছিল। নিকটবর্তী টার্মিনাল থেকে শুধু কিছু সরকারি বাস চলাচল করেছে। দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। তবে হাসপাতাগুলোতে জরুরি পরিষেবা অব্যাহত ছিল। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র আর্থিক সংকট মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। কোভিড-১৯ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বাড়তে থাকা তেলের মূল্য ও প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া সরকারের কর হ্রাসের সিদ্ধান্তে মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে দেশটি। রয়টার্স, বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন