ব্রিটেনে আটক আফ্রিকান শরণার্থীরা যাদের রোয়ান্ডায় নির্বাসিত করার কথা রয়েছে তারা বলেছেন যে, তারা অনশনে রয়েছেন কারণ তারা গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সাথে লড়াই করছেন, একজন বলেছেন যে, তার আত্মহত্যার চিন্তা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য এপ্রিলে আফ্রিকান আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। সে অনুযাযী রোয়ান্ডায় প্রথম নির্বাসন ফ্লাইট ১৪ জুন যাত্রা শুরু করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিকল্পনার মাধ্যমে কালোদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, শুধুমাত্র শেতাঙ্গ বলে ইউক্রেনীয় শরনার্থীরা সেখানে বসবাসের সুযোগ ও নাগরিকক্ত পাচ্ছে। অথচ, কালো বলে আফ্রিকান শরণার্থীদের রোয়ান্ডায় নির্বাসিত করা হচ্ছে, যেখানে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। কারণ দেশটিতে ১৯৯৪ সালে প্রায় ৮ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন।
সিরিয়া থেকে আহমেদ (ছদ্ম নাম) বলেছেন, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করার পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং নথি ছাড়াই যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। প্রথম ফ্লাইটেই তাকে ফেরত পাঠানো হবে। লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরের কাছে কলনব্রুক ইমিগ্রেশন রিমুভাল সেন্টারে আটক ২০ বছর বয়সী এই যুবক ফোনে আল জাজিরাকে বলেছেন, তিনি এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে অনশন করছেন এবং ভাষা ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে কেন তাকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না।
একই কেন্দ্রে ইরান থেকে ২৩ বছর বয়সী কুর্দি বন্দী ফেরহাদ (ছদ্ম নাম) বলেছেন, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের ইউরোপীয় স্বাগত জানানোর সাথে তুলনা করলে তাদের উপরে বৈষম্য করা হচ্ছে। ‘যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন সমস্ত ইউক্রেনীয়কে স্বাগত জানানো হয়েছিল এবং উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল,’ তিনি বলেছিলেন, ‘যেহেতু আমরা সবাই শরণার্থী, আমি বুঝতে পারিনি কেন আমাদেরকে রোয়ান্ডায় স্থানান্তর করা হবে যখন ইউক্রেনীয়দের স্বাগত জানানো হবে, তাদের একটি উন্নত জীবন, আশ্রয় এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু দেয়া হবে।’
আল জাজিরা কলনব্রুকের ১৫ জন বন্দীর সাথে কথা বলেছে, যেখানে ৬০ জনেরও বেশি লোককে রুয়ান্ডায় নির্বাসনের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। লন্ডনের কাছাকাছি অন্যান্য আটক কেন্দ্রে আরও অনেককে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আল জাজিরা সামগ্রিকভাবে কতজনকে নির্বাসিত করা হবে তা জানতে হোম অফিসের সাথে যোগাযোগ করেছিল, তবে বিভাগের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব প্রীতি প্যাটেল, যিনি রোয়ান্ডার সাথে কিগালিতে শরণার্থীদের স্থানান্তর করার জন্য বহু মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, তিনি এই ব্যবস্থাটিকে ক্রমবর্ধমান অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রক্রিয়া করার একটি কার্যকর উপায় হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও দাবি করেন যে, এটি পাচার রোধ করবে এবং ইংলিশ চ্যানেলে মৃত্যু হ্রাস করবে।
তবে অধিকার গোষ্ঠী এবং বিরোধী রাজনীতিকরা বলেছেন যে, নির্বাসনের পদক্ষেপ অনৈতিক। কারণ, শরণার্থীদের সবার একই ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র গায়ের রঙের জন্য কাউকে প্রয়োজনীয় সবকিছু দেয়া হবে, আবার কাউকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হবে, এটি যে কোন নৈতিকতার পরিপন্থী। সূত্র: আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন