স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) বলছে, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানে বিশ্বব্যাপী যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে তা স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্রের বৈশ্বিক মজুদ শিগগিরই আবারও বাড়তে পারে। এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সোমবার প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসআইপিআরআই জানিয়েছে, ইউক্রেনে রুশ হামলা ও কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন বিশ্বের ৯টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনে অভিযানের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে হুমকিও দিয়ে রেখেছে রাশিয়া। গত মার্চের শুরুতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, যদি একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে এতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হবে। যা হবে ধ্বংসাত্মক। এই পরিস্থিতিতে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিচালক ড্যান স্মিথ বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং অপসারণের ক্ষেত্রে কিছু সফলতা এসেছিল, কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের পর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি গত কয়েক দশকের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি। গত বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১২ হাজার ৭০৫ পারমাণবিক ওয়ারহেডের মোট সংখ্যা সামান্য হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রায় ৯০ শতাঙ্কই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছে রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা যা জানা গেছে তা প্রাক্কলন। তবে ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট-এর মতে, রাশিয়ার কাছে ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। এটিই পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। এরমধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫০০, যেগুলো কাজে লাগছে না এবং পরিত্যক্ত হওয়ার পথে। ৯টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইসরাইল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। পারমাণবিক অস্ত্র না বাড়ানোর এনপিটি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১৯১টি দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। অপর দিকে, স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে আসছে বছরগুলোতে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে আর এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহারের ঝুঁকিও কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, বলেছে সংঘাত ও অস্ত্র বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক। সোমবার বেশ কয়েকটি নতুন গবেষণা ফলাফলে এ ধারণা প্রকাশ করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)। এসআইপিআরআই বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। জানুয়ারী ২০২১ থেকে জানুয়ারী ২০২২ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কিছুটা কমলেও পারমাণবিক শক্তিগুলো আশু পদক্ষেপ না নিলে শিগগিরই কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বে এ ধরনের যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে। থিঙ্ক-ট্যাঙ্কটির ২০২২ ইয়ারবুকে এসআইপিআরআইয়ের ‘উয়েপন্স অব মাস ডিস্ট্রাকশন প্রোগ্রাম’ এর পরিচালক উইলফ্রেড ওয়ান বলেছেন, “সবগুলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ তাদের অস্ত্র বাড়াচ্ছে অথবা উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এবং অধিকাঙ্কই পারমাণকি অস্ত্র নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করছে এবং তাদের সামরিক কৌশলগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র ভূমিকা রাখছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক প্রবণতা।” মস্কো ইউক্রেনে কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার তিন দিন পর প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধককে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দেন। রাশিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো দেশগুলোকে এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, “তা এমন হতে পারে যা তোমাদের পুরো ইতিহাসে তোমরা কখনও দেখনি।” আল-জাজিরা, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন