নতুন পদ্ধতিতে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে পরির্বতন এনেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এতে বয়সসীমা ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৩ বছর করা হয়েছে। নতুন এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে সেনাবাহিনীতে কোনও নিয়োগ না হওয়ায় নতুন পদ্ধতিতে বদল আনা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত দুই বছরে নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি এই বিষয়ে সচেতন থেকে, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২২ সালের জন্য প্রস্তাবিত নিয়োগ চক্রের জন্য একবারের জন্য ছাড় দেওয়া হবে’। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপরের বয়সসীমা ২৩ বছরে নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন সেনাবাহিনীতে প্রবেশের স্বপ্ন দেখা বহু মানুষ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার র্যাঙ্কের নিচে চার বছরের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। আবেদনকারীদের বয়স ধরা হয় সাড়ে ১৭ বছর থেকে ২১ বছরের মধ্যে। তাদেরকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয় এই চারবছর বয়সসীমার মেয়াদে। বলা হয়, এরপর সেখান থেকে ২৫ শতাংশকে স্থায়ী ভাবে বাহিনীতে নেওয়া হবে। বাকিদের নেওয়া হবে না। তারা অর্থকড়ি পেলেও, অবসরকালীন কোনও সুবিধা পাবে না। আর এ নিয়েই তীব্র আপত্তি তোলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাওয়া নাগরিকরা। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দশটি রাজ্যে। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড এবং দিল্লিতে বিক্ষোভ হয়। বিহারে ট্রেনে আগুন দেওয়ারও ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের নতুন প্রকল্প ঘোষণার পর মারাত্মক চাপে পড়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এই প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে সরকার। একাধিক টুইট বার্তায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় অগ্নিপথ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘মিথ বনাম ঘটনা’ শীর্ষক নথিতে নানা তুলনা ধরা হয়। ‘ভুল ধারণা দূর করা’ শীর্ষক আরেক নথিও সরকারি সূত্রগুলো প্রকাশ করে। ভারত সরকার এই প্রকল্প ঘিরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করে এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের আশ্বস্ত করে চার বছর পর পূর্ণ করার পর তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে না। খবরে বলা হয়, শুক্রবার তৃতীয় দিনে গড়ানো এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির অন্তত ৭টি রাজ্যে। এছাড়া রাজ্যে রাজ্যে ট্রেনে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সঙ্গে চলছে রাস্তা অবরোধও। এমনকি বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঘটেছে হামলার ঘটনাও। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর বিহারের পশ্চিম চম্পারন জেলার বেত্তিয়ায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী রেনু দেবীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। অবশ্য তিনি এখন পাটনায় অবস্থান করছেন। এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের সহিংসতা সমাজের জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রতিবাদকারীদের মনে রাখা উচিত যে এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকারক।’ ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বিহারে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সহিংসতার পরিমাণ বেশি। আন্দোলনের নামে রাজ্যটিতে ট্রেনে আগুন দেওয়া, বাসের জানালা ভেঙে দেওয়া এবং পথচারীদের ওপর পাথর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া বিহারের একটি জেলায় বিজেপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে উত্তেজিত যুবকরা রেলপথে বসে রাজ্যজুড়ে অনেক জায়গায় রাস্তা ও রেলপথ অবরোধ করে। একই রাজ্যের বেগুসরাই জেলায় একটি রেলস্টেশনে হামলা করে ছাত্ররা। এসময় তারা রেল স্টেশনে হট্টগোল সৃষ্টির পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া সমস্তিপুর জেলায় জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ট্রেনের দু’টি বগিতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। লক্ষীসরাই জেলায় বিজেপির একটি অফিসেও হামলা হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী শুক্রবার সকালে বালিয়ায় একটি রেলস্টেশনে প্রবেশ করে এবং ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগ করে। অবশ্য এর আগেই রেলওয়ে স্টেশনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া উত্তপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় আরেকটি জেলায় রেলস্টেশনের বাইরে রাস্তায় লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। বিহার এবং উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি অংশ নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা রাজ্যেও। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গনাতেও। শুক্রবার সকালে তেলেঙ্গানার সেকেন্দরাবাদে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বলছে, স্টেশন চত্বরে আন্দোলনকারীরা ঢুকে পড়ার পর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এনডিটিভি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন