আধুনিক এই বিশ্বে সবচেয়ে করুণ বিষয় হলো একটি বিশাল সংখ্যাক জনগোষ্ঠী এখনও নিজ ঘরবাড়ি ও দেশ থেকে পালিয়ে শরণার্থী জীবন-যাপন করছে। শরণার্থী ইস্যুটি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে পুরনো ও চলমান সমস্যার একটি। দিন দিন শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শরণার্থীরা অস্থায়ী ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। তাদের নির্দিষ্ট দেশ নেই, নিরাপত্তাহীনতা, অবহেলা আর বঞ্চনায় কাটে জীবন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত নিপীড়ন, সঙ্ঘাত, সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে সারা বিশ্বের জোরপূর্বক বাস্তচ্যুতদের সংখ্যা ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) অতিক্রম করেছে। এই নতুন রেকর্ড ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্যান্য সঙ্ঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এত বেড়েছে বলে মনে করছে ইউএনএইচসিআর।
ইউএনএইচসিআর এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের শেষে সারাবিশ্বে ৮৯.৩ লিয়ন মানুষ বলপূর্বক নিজ ভিটামাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ২৭.১ মিলিয়ন উদ্বাস্তু বা শরণার্থী, ৫৩.২ মিলিয়ন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ, ৪.৬ মিলিয়ন আশ্রয়প্রার্থী এবং ৪.৪ মিলিয়ন ভেনেজুয়েলান বিদেশে বাস্তুচ্যুত। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি শরণার্থী এসেছে দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান এবং সিরিয়া থেকে। দেশগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহসহ নানা সমস্যার কারণে এসব মানুষ বর্তমানে শরণার্থী। এ শরণার্থীদের আশ্রয়দান করেছে তুরস্ক, পাকিস্তান, লেবানন, ইরান, উগান্ডা এবং ইথিওপিয়া। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানকারী একটি দেশ।
সম্পূর্ণ মানবিক কারণে মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রথম আশ্রয় নিয়েছিল ১৯৭৮ সালে।
জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি পালিত হয় এক একটি প্রতিপাদ্য ধরে। এ বছর, শরণার্থীদের নিরাপত্তা অধিকার চাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২২ এর মূল প্রতিপাদ্য: ‘যে কেউ, যেখানেই থাকুক, যখনই থাকুক তাদের নিরাপত্তা চাওয়ার অধিকার রয়েছে’। বিশ্বের প্রতিটি মানুষেরই নিরাপত্তা চাওয়ার অধিকার রয়েছে। তারা যেই হোক না কেন, যেখান থেকেই আসুক না কেন, যখনই আসুক না কেন, যারা পালাতে বাধ্য হয়েছে বা যাদের পালাতে বাধ্য করা হয়েছে তাদের সাথে মর্যাদার সঙ্গে আচরণ করা উচিত। যে কেউ সুরক্ষা চাইতে পারে, তারা কে বা তারা যা বিশ্বাস করুক না কেন, সেটি বিবেচনা না করে তাদের নিরাপত্তা চাওয়ার বিষয়টি যেটি একটি মানবাধিকার তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আজ বিশ্বব্যাপী জাতিসঙ্ঘ সদস্য দেশগুলো বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালন করবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন