কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। স্বাদে ঘ্রাণে অনন্য ফল কাঁঠাল। পাকা ও কাঁচা, দুইভাবেই কাঁঠাল খাওয়া যায়। এমনকি অনেকে কাঁঠালের ফুল থেকে বের হওয়ার পর (মুছি) খেতেও ভালবাসেন। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। কাঁঠালের বীজ খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফলের মধ্যে আকৃতিতে বড় কাঁঠাল। কাঁচা কাঁঠাল দেখতে সবুজ মনোরম, পাকা সোনালী মনোরম। আল্লাহ তায়ালার এই দানগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মাথা নত না হয়ে পারে না।
উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে শক্তি ৩৯৭ কিলোক্যালরি, খাদ্য-আঁশ ২.০০ গ্রাম, চিনি ১৯.০৮ গ্রাম, স্নেহ- ০৬৪ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটা ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রোগ্রাম, লুটিন জিয়াক্সানথিন ১৫৭ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন (বি১) ০.১০৫ মিঃগ্রাম, রিবোফ্লাবিন (বি২) ০.৫৫ মিঃগ্রাম, নায়াসিন (বি৩) ০.৯২ মিঃগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.২৩৫ মিঃগ্রাম, ভিটামিন (বি৬) ০.৩২৯ মিঃগ্রাম, ফোলেট (বি৯) ২৪ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ১৩.৮ মিঃগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৩৪ মিঃগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিঃগ্রাম, লৌহ ০.২৩ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২৯ মিঃগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৪৩ মিঃগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিঃগ্রাম, পটাসিয়াম ৪৪৮ মিঃগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিঃগ্রাম, জিংক ০.১৩ মিঃগ্রাম ও অন্যান্য।
উপকারিতা:
১. বয়সের ছাপ দূর করতে: কাঁঠাল বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মুখে বলিরেখা পড়তে দেয় না। শরীরের ত্বককে রাখে মসৃনা। এর মধ্যকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ সৃষ্টিকারী মুক্ত উপাদানের (ফ্রি র্যাডিক্যালস) বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২. হজমশক্তি বাড়াতে: কাঁঠাল দেখতে মানুষের পেটের মত। তাই পেটের নানা রকম রোগ সারাতে কাঁঠাল উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়াতে সাহায্য করে। এতে যে আঁশ থাকে, তা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। অম্লতা ও আলসার ঠেকাতে কাঁঠাল উপকারী।
৩. ওজন কমায়: কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ খুব কম। তাই বেশি খেলেও ওজন বাড়ার শঙ্কা নেই। পেট ভরে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে কাঁঠাল।
৪. উচ্চ রক্তচাপে: ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়াম ৪৪৮ মিঃগ্রাম। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্যে কাঁঠাল উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। ষ্ট্রোক ও হৃদ রোগের ঝুকি কমায়।
৫. মানসিক চাপ কমাতে: কাঁঠাল খেলে মানসিক চাপ তথা টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমে মনকে প্রফুল্ল করে তোলে।
৬. শর্করা নিয়ন্ত্রণে: কাঁঠালে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে যা রক্তের চিনির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৭. শ্বেতকনিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে: কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়, রক্তের শ্বেতকনিকার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৮. রাত কানা রোগে: কাঁঠালে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগ সারাতে সাহায্য করে।
৯. হাড়কে শক্তিশালী করতে: কাঁঠালে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও হাড়কে শক্তিশালী করতে ভূমিকা পালন করে।
১০. দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে: কাঁঠালে থাকা ফুক্টোজ ও সুকোজ রক্তে সুগারের মাত্রা না বাড়িয়েই চমৎকারভাবে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে।
১১. দাঁতের মাড়ির শক্তি বৃদ্ধিতে: কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে মানবদেহে ভিটামিন সি তৈরি হয় না। বিভিন্ন ফল মূল, শাক সবজি খাওয়ার মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ হয়। কাঁঠাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে।
১২. শিশু স্বাস্থে: ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি কাঁঠালের রস খাওয়ালেলে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হয় অন্যদিকে শিশুর প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়।
১৩. ক্লান্তি নাশে: অত্যধিক পরিশ্রমের পর ৩-৪ চামচ কাঁঠালের রস আধা কাপ দুধে মিশিয়ে খেলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
১৪. বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা: বার্ধক্য জনিত ক্ষয়হেতু দুর্বলতায় ৫-৬ চামচ কাঁঠালের রস সকাল বিকাল দু বেলা কয়েকদিন খেলে দুর্বলতা দূর হয়ে যাবে।
১৫. অরুচি দূর করতে: ২-৩ চামচ কাঁঠালের রসের সাথে সামান্য দুধ মিশিয়ে খেলে রুচি ফিরে আসবে। তবে শ্লেষ্মাজনিত অরুচিতে এতে কাজ হবে না।
১৬. সর্দি কাশি: এই সময়ে গরম আবার বৃষ্টি। খুব গরম আবার ঠান্ডায় অনেকেরই জ্বর কাশি সর্দি হয়ে থাকে। মৌসুমি এই সর্দি কাশি ও জ্বর সারাতে কাঁঠাল বেশ উপকারী।
১৭. মায়ের পুষ্টিতে: প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মা ও তার গর্ভধারণকৃত শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়ে যায়।
১৭. হৃদরোগের ঝুকিতে: কাঁঠালে থাকা ভিটামিন বি৬ হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
১৮. মায়ের দুগ্ধ বৃদ্ধিতে: দুগ্ধদানকারী মা পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
১৯. গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়: গর্ববতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভস্থীত সন্তানের বৃদ্ধিও স্বাভাবিক হয়।
২০. রক্ত স্বল্পতায়: কাঁঠালে থাকা খনিজ উপাদান আয়রন দেহের রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
২১ হাঁপানী তাড়াতে: কাঁঠালের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে এটিও রয়েছে যে অ্যাজমা প্রতিরোধের গুণাবলী। কাঁঠালের শিকড় ছেঁচে একে ফুটিয়ে পানিটা খাওয়ালে হাঁপানী তথা অ্যাজমার জন্য উপকারী হয়।
২২. দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে: কাঁঠালে থাকা ভিটামিন এ ও অন্যান্য উপাদান দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
২৩. ত্বকের মসৃনতায়: ত্বক সুন্দর মসৃণ রাখতে নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়া চাই। কাঁঠাল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি সে ত্বককেও আকর্ষনীয় করে তোলে। কাঁঠাল ত্বকের বলিরেখা দূর করে দেয়। চেহারায় লাবণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করে দেয় কাঁঠাল।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের কাঁঠাল খুব বেশী না খাওয়াই ভাল। সকলের সমস্যা না হলেও কারো কারো ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায়। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদেও মধ্যে যাঁদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো। কারণ কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম বিদ্যমান।
মুন্সি আব্দুল কাদির
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন