আগামীকাল রোববার জার্মানির বাভারিয়ায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৮ তারিখ তার দেশে ফিরে আসার কথা। ফিরতি পথে আবু ধাবিতে একবেলা কাটিয়ে আসবেন মোদি, জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কেন হঠাৎ আবু ধাবি যাবেন প্রধানমন্ত্রী, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সম্প্রতি বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মার একটি মন্তব্য ঘিরে মুসলিম বিশ্বের বিরাগভাজন হতে হয়েছিল ভারতকে। মহানবী (সা:) নিয়ে নূপুর শর্মার ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পর মুসলিম বিশ্বের ২০টি দেশ তার প্রতিবাদ করেছিল। কাতার, সউদী আরবের পাশাপাশি আবু ধাবিও ওই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছিল। যার জেরে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়। ভারত বিবৃতি দিয়ে জানায়, ওই মুখপাত্রের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল ব্যবস্থা নিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিবাদ দৃশ্যতই কূটনৈতিকভাবে ভারতকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিল। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি থেকে ফেরার পথে মোদির আবু ধাবি সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারিভাবে ভারত অবশ্য জানিয়েছে, আবু ধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যু এবং নতুন শাসক শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের ক্ষমতালাভ উপলক্ষেই মোদি সেখানে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি সাবেক শাসকের প্রতি শোকজ্ঞাপন করবেন এবং নতুন শাসককে অভিনন্দন জানাবেন। উল্লেখ্য, শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুর পর ভারতের জাতীয় পতাকা একদিন অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল।
প্রবীণ সাংবাদিক এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তেল রপ্তানি বাদ দিলে আমিরাতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য-সঙ্গী ভারত। ফলে ভারত কোনোভাবেই সেই বাণিজ্য সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। মোদির সফর সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বার্তা’।
শরদের বক্তব্য, মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর ভারতীয় মুসলিম কাজ করতে যান। আবু ধাবিতে প্রচুর ভারতীয় কাজ করেন। মোদির সফর সেই ভারতীয়দের জন্যও একটি বড় বার্তা। শুধু তা-ই নয়, আমিরাতের প্রতিবেশী দেশ কাতার। কাতার বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিল। প্রকাশ্যে ভারতকে ক্ষমাও চাইতে বলেছিল। বন্ধু দেশ আমিরাতে গিয়ে মোদি কাতারকেও বার্তা দিতে চাইছেন বলে মনে করছেন শরদ।
মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। তার চেয়েও বড় কথা, মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কাজ করেন। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না ভারত। সেই লক্ষ্যেই মোদির এই ঝটিতি সফর বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। উল্লেখ্য, ওই বিতর্কের পর মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের একাংশ প্রতিবাদ করেছিলেন। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, কাতারের মতো দেশ ওই ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। যা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। মোদির সফরে সেই আতঙ্কও খানিকটা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র : পিটিআই, এএনআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন