আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ঠেকাতে কার্বনশূন্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বিশ্ব। পারমাণবিক বিদ্যুৎ এমনই এক পরিবেশবান্ধব উপায়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর চীনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি প্রকাশিত চায়না নিউক্লিয়ার এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১৬ হাজার ৬৩০ কোটি কিলোওয়াটে উন্নীত হয়েছে। খবর সিজিটিএন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে চীন বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ। দেশটিতে বর্তমানে ৫৪টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট কার্যরত। এর মোট সক্ষমতা ৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার কিলোওয়াট। এ বিষয়ে চায়না নিউক্লিয়ার এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সচিব ঝাং তিংকে বলেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে আরো তিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট চালু করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৩৩ লাখ ৯০ হাজার কিলোওয়াট। স্থিতিশীল, কম কার্বন নির্গমন ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে চীনের পরিবেশ উন্নয়নের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস পারমাণবিক বিদ্যুৎ। এ বিষয়ে ঝাং তিংকে জানান, জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের তুলনায় পারমাণবিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে কার্বন নির্গমন অনেক কম হয়। প্রতি ১০ লাখ কিলোওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট প্রতি বছর কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ৬০ লাখেরও বেশি টন কমিয়ে আনে। চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোণ্ডঅপারেশনের (সিজিএন) তথ্য বলছে, সম্প্রতি হোংইয়ানহে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে। এটি উত্তরপূর্ব চীনের লিইয়াওনিং প্রদেশে অবস্থিত। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মোট সক্ষমতা ৬৭ লাখ ১০ হাজার কিলোওয়াট। বাণিজ্যিক কাজে ইউনিট ৬ চালু করার মাধ্যমে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে হোংইয়ানহে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এক বছরে ছয়টি ইউনিট ঘণ্টাপ্রতি ৪ হাজার ৮০০ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এটি লিইয়াওনিং প্রদেশের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ। চীনের সর্বোচ্চ সংখ্যক কার্যরত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটটি দেশের দক্ষিণের গুয়াংডং প্রদেশে অবস্থিত। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দায়া বেই নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অন-গ্রিড উৎপাদন ঘণ্টাপ্রতি ১১ হাজার ৩৭২ কোটি কিলোওয়াটে পৌঁছে। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ৪ শতাংশ। এছাড়া ইয়াংজিংয়াং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ঘণ্টাপ্রতি ১১ হাজার ৩১৩ কোটি কিলোওয়াটে উন্নীত হয়। পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের লিয়ানইয়ুনগাং শহরের তিয়ানওয়ান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি ইউনিট বর্তমানে কার্যকর। এদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে শহরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ঘণ্টাপ্রতি ১৪ হাজার ৪০৯ কোটি কিলোওয়াট। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ আসে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। এ বিষয়ে জিয়াংসু নিউক্লিয়ার পাওয়ার করপোরেশনের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের সাধারণ ব্যবস্থাপক লিউ ইয়ংশেং বলেন, এ বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে আমাদের ছয়টি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ঘণ্টাপ্রতি ১৩ হাজার ৭০১ কিলোওয়াট। সে হিসাবে এক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বছরের প্রথমার্ধে ছয়টি ইউনিটের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার ৪৫৮ কিলোওয়াটে পৌঁছনোর প্রত্যাশা রয়েছে। সিজিটিএন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন