শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তোলপাড়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তোলপাড় চলছে। শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশগুলোর মুদ্রামানেরও পতন হচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার মুদ্রার বড় ধরনের দরপতন হলেও এখন আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মুদ্রাযুদ্ধে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা, ভারতীয় রুপি, পাকিস্তানি রুপি, শ্রীলংকার রুপি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরো, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, কানাডার কানাডিয়ান ডলারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ঠিক বিপরীতে চিত্র দেখা যাচ্ছে সউদী আরবের মুদ্রা রিয়ালের ক্ষেত্রে। তাদের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে সামান্য বেড়েছে। কুয়েত ও কাতারের মুদ্রার মানও ডলারের বিপরীতে সামান্য বেড়েছে। সূত্র জানায়, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে মানুষের চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। এতে মুদ্রা ব্যবহারের চাহিদা কমে। ওই সময়ে বহুল ব্যবহৃত মুদ্রা ডলার, পাউন্ড ও ইউরোর দাম ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছিল ইউরোর দাম। এরপরই ছিল পাউন্ডের অবস্থান। কিন্তু ডলারের দাম কমেছিল তুলনামূলক কম। ওই সময়ে লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট (লাইবর) সুদের হার ইউরোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থায় গিয়েছিল। করোনার সংক্রমণ কমার পর গত বছরের শেষদিক থেকে মুদ্রাবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে ইউরোপের দেশগুলোসহ আমেরিকা ও কানাডা রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থার পদ্ধতি সুইফট বা সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমেও লেনদেন বন্ধ করে দেয়। অথচ একক দেশ হিসাবে এতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন করত রাশিয়া। অবরোধ আরোপের ফলে রাশিয়ার সব ধরনের লেনদেন বন্ধ হয়ে। এতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম দ্রুত কমতে থাকে। এক বছর আগে এক রুবলের দাম ছিল ৩ টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। ওই সময়ে ডলারের বিপরীতে রুবল দর হারিয়েছে ৩৫ শতাংশ। ইউরোর বিপরীতেও রুবল দর হারিয়েছিল ২২ শতাংশ। কিন্তু রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর ইউরোপের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকাংশে নির্ভরশীল। রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি না করায় ইউরোপের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গিয়ে তাদের মুদ্রার মান দ্রুত কমতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ইউরো ও ডলারের দাম প্রায় সমান হয়ে গেছে। অথচ এক বছর আগেও ডলারের চেয়ে ইউরোর দাম ২৫ শতাংশ বেশি ছিল। অর্থাৎ প্রতি ডলার ছিল ৮৬ টাকা। ইউরো ছিল ১০৪ টাকা। এখন ডলার ৯৪ টাকা ও ইউরোও ৯৪ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ডলার ও ইউরোর দাম সমান হয়ে গেছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের মুদ্রার মান খুব একটা কমেনি। তবে জার্মানি, সুইডেনসহ অনেক দেশের নিজস্ব মুদ্রার মান কমে গেছে। ইউরোর মুদ্রার মান পুনরুদ্ধার করতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ইউরোর সুদের হার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকান কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা বাড়াতে এর সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে ডলারে বিনিয়োগ বেড়েছে। এতে বেড়ে গেছে ডলারের দামও। তবে রাশিয়া, মার্কিন ও ইউরোপীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবরোধ মোকাবিলা করতে বিকল্প লেনদেন পদ্ধতির সন্ধান করছে। তারা চীন, ভারত, ইরানসহ মিত্র দেশগুলোকে নিয়ে সুইফটের মতো একটি আন্তর্জাতিক লেনদেন কাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ খবর বিশ্বব্যাপী চাউর হওয়ার পর রশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এপ্রিলে প্রতি রুবলের দাম ১ টাকা ৯ পয়সায় নেমে গিয়েছিল। এখন তা বেড়ে ১ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে। চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মান ডলারের বিপরীতে কিছুটা কমেছে। তবে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রফতানির বাজার ধরে রাখতে মুদ্রার মান কমিয়েছে। ডলারের বিপরীতে ভারতের মুদ্রার মানও কমেছে। ডলারের বিপরীতে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের মুদ্রার মান সবচেয়ে বেশি কমেছে। ফলে দেশ দুটি এখন বড় সংকটে পড়েছে। নেপালি মুদ্রা রুপির দামেও বড় পতন হওয়ায় তারাও সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশেও প্রবল ডলার সংকট। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এ প্রসাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়ায় বৈশ্বিক এই সংকট দেখা দিয়েছে। রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন