মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পারমাণবিক বোমা তৈরির ক্ষমতা রয়েছে ইরানের: খামেনির উপদেষ্টা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ১১:০৪ এএম

আঞ্চলিক অথবা বিশ্বব্যাপী কোনো দেশ আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলে মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্র। শক্তিশালী এই অস্ত্র কাজে লাগিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জনেই ব্যস্ত বিশ্বের পরাশক্তি ও ক্ষমতাধর দেশগুলো। মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাবশালী দেশ হয়ে উঠতে ইরান দীর্ঘদিন ধরে এই অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অবশ্য শান্তিপূর্ণ উদ্দেশেই পারমাণবিক কর্মসূচি চলছে বলে বরাবরই দাবি করে আসছিল তেহরান। তবে এবার যেন ভেতরের কথাটা বেরিয়ে এলো। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটিরই উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। সোমবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের এক ইরানি কর্মকর্তা রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরজাজিরাকে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। তবে দেশটি এখনও তা (অস্ত্র তৈরি) করার সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এএফপি বলছে, ইরানের ‘পরমাণু বোমা তৈরির প্রযুক্তিগত ক্ষমতা আছে’ বলে দাবি করা ওই কর্মকর্তার নাম কামাল খারাজি। তিনি ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত একটি উপদেষ্টা বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তবে কামাল খারাজিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সিনিয়র উপদেষ্টা বলে বর্ণনা করেছে আরেক বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রোববার আলজাজিরা টিভিকে তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকলেও তেহরান এখনও ‘পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। এসময় ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করা থেকে বিরত রাখার অঙ্গীকার করে ইসরায়েলের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। আর এরপরই তেহরানের অন্যতম শীর্ষ একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে পরমাণু বোমা তৈরির এই মন্তব্য সামনে এলো।
এএফপি বলছে, ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল খারাজি আলজাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েলের গভীরে হামলা করার ক্ষমতা অর্জন করার জন্য ইরান ব্যাপক মহড়া চালিয়েছে। তার দাবি, ‘যদি স্পর্শকাতর (ইরানি) স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়’ তাহলে ইসরায়েলের গভীরে আঘাত হানবে তেহরান।
অবশ্য ইসরায়েলের গভীরে হামলার সক্ষমতা অর্জনের ওই মহড়া কবে হয়েছে তা স্পষ্ট করেননি কামাল খারাজি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এর ফলে পামাণবিক বোমা প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম মজুতের ক্ষেত্রে রাশ টানতে বাধ্য হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির প্রশাসন। এছাড়া ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে, সে দিকেও নজর রাখে জাতিসংঘ।
কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল টানাপোড়েন শুরু হয়। এমনকি রাশিয়া থেকে সাহায্য পাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় দেশটির।
২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে ওয়াশিংটন ফের এই চুক্তিতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শাসনামলে ৬ বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের কয়েক দফা আলোচনা হয়।
তবে এরপর জুনে অনুষ্ঠিত ইরানের নির্বাচনে ইব্রাহিম রাইসি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই সংলাপ বন্ধ ছিল। অবশ্য গত বছরের নভেম্বর থেকে কয়েক দফায় সেই আলোচনা চললেও আলোচনায় কার্যত এখনও অচলাবস্থা চলছে।
আর এই পরিস্থিতিতেই ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে বলে মন্তব্য করলেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন