আসন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিটভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকগুলো। কোন কোন খাতে ঝুঁকি বেশি তা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছে তারা। আসন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কটকে বড় ‘ঝড়’ হিসেবে দেখছেন জেপি মরগান চেজের সিইও জ্যামি ডিমন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভোক্তাদের উদ্বেগের প্রভাব পড়েছে আর্থিক খাতে। মরগান স্ট্যানলির শীর্ষ নির্বাহী জেমস গরম্যান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে এক শব্দে ব্যাখ্যা করতে চাইলে বলতে হবে ‘জটিল’। ইউক্রেন সঙ্কট, সুদহার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক হুমকি ও অন্যান্য কার্যকারণের কারণে বিশ্ব এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে অবশ্য ২০০৮-এর মতো জটিল বলতে নারাজ গরম্যান। আগের বিশ্ব মন্দার চেয়ে এখন ব্যাংক খাত অনেক শক্তিশালী বলে মনে করেন তিনি। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরই মধ্যে আয়-ব্যয়ের উপাত্ত প্রকাশ করেছে মরগান স্ট্যানলি, জেপি মরগান চেজ, ওয়েলস ফার্গোসহ ওয়াল স্ট্রিটভিত্তিক শীর্ষ ব্যাংকগুলো। এতে মুনাফা পতনের কথা জানিয়েছে মরগান স্ট্যানলি, জেপি মরগান চেজ, ওয়েলস ফার্গো ও ব্ল্যাকরকের মতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি প্রকাশিত আয়-ব্যয়ের উপাত্তে দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে জেপি মরগানের মুনাফা ২৮ শতাংশ কমেছে। মন্দার ঝুঁকিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতও নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় নীতিনির্ধারকরা সুদের হার বাড়িয়ে চলেছেন। সম্পদের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংক জানিয়েছে, জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে জেপি মরগানের মুনাফা ৮৬৫ কোটি ডলার বা শেয়ারপ্রতি ২ ডলার ৭৬ সেন্টে পৌঁছেছে। যেখানে গত বছরের এ সময়েও ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৯৫ কোটি ডলার বা শেয়ারপ্রতি ৩ ডলার ৭৮ সেন্ট। গত শুক্রবার আয়-ব্যয়ের উপাত্ত প্রকাশ করেছে সিটিগ্রুপ ও ওয়েলস ফার্গো। এতে দেখা গেছে, প্রত্যাশার চেয়ে আয় কমেছে ওয়েলস ফার্গোর। সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ৩১০ কোটি ডলার এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৭৪ সেন্ট। ডাটা প্রোভাইডার ফ্যাক্টসেটের পূর্বাভাসে যেখানে শেয়ারপ্রতি ৮০ সেন্ট মুনাফার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। সিটিগ্রুপের আয়-ব্যয়ের উপাত্তে দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৬৪ কোটি ডলার, ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাস যেখানে ছিল ১ হাজার ৮২২ কোটি ডলার। পূর্বাভাসের চেয়ে আয় বাড়লেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিটিগ্রুপের মুনাফা ২৭ শতাংশ কমেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক ব্যাংকটি এক বিবৃতিতে জানায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তাদের মুনাফা ছিল ৪৫৫ কোটি ডলার বা শেয়ারপ্রতি ২ দশমিক ১৯ ডলার। গত বছরের একই প্রান্তিকে সিটিগ্রুপের মুনাফা হয়েছিল ৬১৯ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) এক কর্মকর্তা বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ধাঁধা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার গত বৃহস্পতিবার এক বক্তৃতায় বলেন, শ্রমবাজার শক্তিশালী হলেও প্রকৃত অর্থনীতি খুবই নাজুক। তবে সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। এদিকে জেপি মরগান চেজের সিইও ডিমন মনে করেন, ফেডের কঠোর মুদ্রানীতি, অস্থিতিশীল বাজার, ইউক্রেন সঙ্কট এবং খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যের প্রভাবে বর্তমানে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ সত্ত্বেও জেপি মরগানের গ্রাহকদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যয় গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকটির মুখ্য আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) জেরিমি বার্নাম জানান, তাদের বেশির ভাগ গ্রাহকের সঞ্চয়ের চেয়ে ব্যয় বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে ভোক্তা ব্যয়। ভোক্তা ব্যয় সঙ্কুচিত হলে দেশটি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বলে শঙ্কা অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের। ফেডের আগ্রাসী সুদহার বৃদ্ধিতে এরই মধ্যে আবাসন খাতের ক্রেতারা বাড়ি ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। জেপি মরগান বলছে, গৃহঋণ থেকে আয় বছরওয়ারি ২৬ শতাংশ কমেছে। রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন