স্মরণকালের যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে শ্রীলঙ্কা পড়েছে, তা থেকে উদ্ধার পেতে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাহসিংহেকে ফের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিসিটিভি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য। সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহের শপথ নেওয়ার পর দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ও জনগণের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন শি জিনপিং। সিসিটিভিকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট চলছে, তা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে দেশটি; এবং সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার এই যাত্রায় আমি আমার সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণকে সহায়তা করতে চাই।’ ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট পার করছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বর্তমানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলে কিছু নেই। ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই দ্বীপরাষ্ট্র। শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটের শুরু অবশ্য ২০২০ সাল থেকেই। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শ্রীলঙ্কায় সরকার গঠন করে রাজাপাকসে ভাইয়েরা। সেই সরকারের অব্যবস্থাপনা, অযৌক্তিকভাবে কর ও রাজস্ব কাটছাঁট করা ও করোনা মহামারির কারণে দেশটির পর্যটন খাতে ধস নামায় ২০২০ সাল থেকেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করে শ্রীলঙ্কার সরকার। তার মধ্যে চীনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত চীনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে দেশটি। এছাড়া ভারতের কাছ থেকে ৩৮০ কোটি ডলার, জাপানের কাছ থেকে ৩৫০ কোটি ডলার ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে ভারত মহাসাগরের এই ছোট দ্বীপদেশটি। অপরদিকে, রাশিয়ার মিত্র চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। তাইওয়ান ইস্যুতেও দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে। এছাড়া প্রযুক্তি খাতের প্রতিযোগিতার ইস্যুতে দুটি বৈশ্বিক পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি অব্যাহত রয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর মাত্র একবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরাসরি যোগাযোগ হয়। চলতি বছরের ১৮ মার্চ এক ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট। সে সময় বাইডেন ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়াকে সহায়তা করার ব্যাপারে জিনপিংকে সতর্ক করেন। তবে বাইডেনের করোনাক্রান্ত হওয়ার খবরে চারমাস পর এই প্রথম শুক্রবার তাকে সরাসরি বার্তা পাঠিয়েছেন জিনপিং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট করোনাক্রান্ত হওয়ায় একদিন পর জিনপিং তাকে সমবেদনা জানান বলে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বার্তায় জিনপিং লিখেছেন, আমি আপনার প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করছি এবং আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই দুই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একে অপরকে চেনেন। সিসিটিভি,এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন