শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পরাশক্তিদের প্রতিযোগিতা আফ্রিকার জন্য হিতকর

ফরেন পলিসি | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ওবামা প্রশাসনের আমলে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বেশি সতর্কবার্তার মধ্যে একটি ছিল এই যে, বেইজিং আফ্রিকা জুড়ে তার রাজনৈতিক আদর্শ রফতানি করতে পারে। তৎকালীন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি ক্লিনটন আফ্রিকান নেতাদের সতর্ক পরামর্শ দিয়েছিলেন এই বলে যে, পশ্চিমাদের কাছ থেকে তাদের আরো বহু কিছু শেখার আছে। তিনি প্রায়শই অভিযোগ করতেন, চীন তার আফ্রিকান অংশীদারদের পশ্চিমা ধারার গণতন্ত্রকে পরিহার করে, বিশেষ করে তথ্য ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বেইজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী শাসন পদ্ধতি অবলম্বন করতে উৎসাহিত করতে পারে।

অকার্যকর বা দুর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক শাসন আফ্রিকায় অনেক দেশেই গত দশক থেকে সামরিক শাসন বা স্বৈরাচারের রূপ নিয়েছে। উগান্ডা এবং আইভরি কোস্টের মতো জায়গায় পশ্চিমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নামে স্বৈরাচার আফ্রিকার গণতন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণœ করেছে। পশ্চিমাদের অন্যতম প্রিয় রুয়ান্ডায় দীর্ঘদিনের নেতা পল কাগামে কোনো নিষেধাজ্ঞা ও আপত্তি ছাড়াই নির্বাচনে তথাকথিত সর্বসম্মত এবং খুব কমই বিশ্বাসযোগ্য নিরঙ্কুশ জয়লাভ করেছেন। কাগামে সম্প্রতি আরো ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, ‘এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’

স্পষ্টতই গণতন্ত্রবিরোধী এ ধরনের আচরণ পশ্চিমারা আফ্রিকায় যে রাজনৈতিক মডেল প্রচার করেছে, তার সমস্যাগুলোর একটি অংশ মাত্র। এতদিন আফ্রিকায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের আদর্শের বুলি কপচানোর পর পশ্চিমের উচিত আফ্রিকান দেশগুলোর সাথে আরো খোলাখুলিভাবে জড়িত হওয়া। চীনকে মোকাবেলা করতে গেলে আফ্রিকার নির্বাচনগুলোকে বাস্তব শাসন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করার উপায়গুলো বিকাশ করার জন্য পশ্চিমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করা উচিত। যেমন উচ্চ মানের নির্দেশনা এবং সরঞ্জাম সহ স্কুলে উপস্থিতির উচ্চ হার, সাশ্রয়ী ম‚ল্যের ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা, রেল থেকে শুরু করে সড়ক ও পাতাল রেল ব্যবস্থা পর্যন্ত উন্নত গণপরিবহন ও বিকল্প, রাষ্ট্রীয় বাজেট, ক্রয় ও চুক্তিতে স্বচ্ছতার উন্নতি, এবং সর্বস্তরে দুর্নীতির উল্লেখযোগ্য হ্রাস।

অভ্যন্তরীণভাবে চীন গত দুই প্রজন্মের মধ্যে নজিরবিহীন দ্রুততা এবং হিসাবের সাথে অবকাঠামো নির্মাণ, তার আমলাতন্ত্রের মান উন্নত করার পাশাপাশি পরিষেবা প্রদানের ক্ষমতার উন্নতি করে এ কয়েকটি ক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক সাফল্য অর্জন করেছে। এমন নয় যে, আফ্রিকান দেশগুলোর প্রায়শই নেতিবাচকভাবে নেয়া চীনের মডেলটি অনুসরণ করা উচিত। এটাও নয় যে, চীনা শাসনব্যবস্থা গুরুতর দুর্নীতি থেকে মুক্ত। এমনও নয় যে, যে চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোর চেয়ে বেশি সফলভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে কারণ তারা সংসদীয় পদ্ধতির জটিলতা, জনমত, নির্বাচনী পরিবর্তন, বা আইনের আদালতের চ্যালেঞ্জের মধ্যে সময় নষ্ট করে না। তবে, আফ্রিকান দেশগুলোকে জাতীয় অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব সম্পর্কে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আরও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত আমলাতন্ত্র তৈরির বিষয়ে চীনের অনেক কিছু শেখানোর আছে।

আফ্রিকা মহাদেশে আধিপত্য বিস্তারে এ দুই পরাশক্তির প্রতিযোগিতা আফ্রিকার জন্য হিতকর। চীনের সম্ভাব্য অবদান আফ্রিকার উন্নয়নে একটি বড় অবদান রাখতে পারে। চীন সম্পর্কে তার প্রথাগত শঙ্কা এবং বিভ্রান্তির পরিবর্তে, পশ্চিমের এই সত্যে আস্থা রাখা উচিত যে, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনগুলো এখনও আফ্রিকানদের তাদের নিজস্ব সমাজের জন্য গণতান্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ়তা প্রকাশ করে। এর মধ্যে অনাহুত রাষ্ট্রীয় নজরদারি এবং সেন্সরশিপের বিপরীতে খোলা তথ্য ব্যবস্থার শক্তিশালী সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত এবং এ অঞ্চলে ইতোমধ্যে চীনের প্রতিদ্ব›িদ্বতা পশ্চিমকে তার নিজস্ব অকার্যকর পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে, যা আফ্রিকা জুড়ে উন্নত শাসন ব্যবস্থা শাসন ব্যবস্থা এবং কর্মদক্ষতা তৈরিতে সহায়ক হবে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন