তীব্র দাবদাহ, সাথে খরার কারণে জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌপথে চলাচল সীমিত হয়ে পড়ার পর জার্মানিতে বিদ্যুতের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে গ্রীষ্মের এই যন্ত্রণাদায়ক গরম ইউরোপের জ্বালানি ব্যবস্থার ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে। এই চাপ পুরো ইউরোপজুড়েই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের আয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে; শীতের সময় জ্বালানির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এ সংকট আরও তীব্র হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ার পেছনে এর ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবকিছুরই অবদান রয়েছে। সর্বশেষ যা ‘গলা টিপে’ ধরছে, তা হল রাইন নদী। গত কিছুদিন ধরে এ নৌপথ দিয়ে নৌ চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ানোয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গ্যাস বাঁচাতে সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের দেশগুলোকে কয়লার উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। চাইলে সড়ক বা রেলপথেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কয়লা নিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু তাতে খরচ নৌপথের তুলনায় অনেক বেশি হবে। “রাইন নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত কয়লা পাচ্ছে না কেন্দ্রগুলো,” এক নোটে এমনটাই লিখেছেন এএমই গ্রুপের বিশ্লেষকরা। এসবের ফলে এরই মধ্যে ইউরোপিয়ান এনার্জি এক্সচেঞ্জে জার্মানির আগামী বছরের প্রতি মেগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম তিন দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৪২০ ইউরোতে পৌঁছে গেছে, যা এক বছর আগের দামের তুলনায় ৫ গুণেরও বেশি। তীব্র দাবদাহ ও খরা পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর শক্তির উৎস নদী আর পানি আধারগুলোকেও শুকিয়ে ফেলছে। “কার্যত এই শুষ্ক অবস্থার কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না। এবারের গ্রীষ্মেই যে খুব গরম বা শুষ্ক অবস্থা দেখা যাচ্ছে,তা নয়, এই পরিস্থিতি অনেক দিন ধরে চলছে, যা খরার প্রভাবকে আরও জটিল করেছে,” বলেছেন অসলোভিত্তিক একটি জ্বালানি প্রযুক্তি কোম্পানির হাইড্রোলজিস্ট সিজে এরিকসেন হোমেন। “জুলাই, বা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস শুষ্ক, সমস্যা মোটেও এমন নয়, পুরো বছর ধরেই এমন শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করছে,” এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন তিনি। জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের একাংশ বছরের এই সময়ে গড়ে যে পরিমাণ বায়ুবিদ্যুৎ পেত, এ বছর তার চেয়েও কম মিলছে। জার্মানি আর যুক্তরাজ্যই এ ধরনের বিদ্যুতের সবচেয়ে বড় উৎপাদক। বায়ু বিদ্যুৎ কম হওয়ায় বিদ্যুতের জন্য দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর কেন্দ্রের উপর নির্ভরতাও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফ্রান্সের পুরনো পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কেন্দ্র এখন রক্ষণাবেক্ষণজনিত কারণে বন্ধ রয়েছে, যার কারণে তাদেরকেও এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ব্লুমবার্গ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন