অর্থনীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগে রয়েছে চীন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির ঝেজিয়াং প্রদেশের ইয়ু শহরে কোভিড-১৯ লকডাউনের মধ্যে হাজার হাজার ই-কমার্স ব্যবসায়ী ডেলিভারি স্থগিত করেছেন। যার কারণে বাণিজ্য প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটতে চলেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিজিটিএনের প্রতিবেদনে, স্থানীয় প্রশাসন ক্রমবর্ধমান করোনভাইরাসের কারণে শহরটিকে একটি স্থির ক্লোজ-অফ ব্যবস্থাপনার মধ্যে রেখেছে। ফলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কোনো যানবাহন বা মানুষকে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ইতিমধ্যে, চীনে রিয়েল এস্টেটের মন্দা ব্যাংক এবং প্রাদেশিক সরকার উভয়কেই বিপর্যস্ত করে ফেলেছে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাবের হুমকি দিয়েছে।
নিক্কেই এশিয়ার মতে, গত ১২ মাসে মাসে প্রোপার্টি ডেভেলপারদের ঋণ-জ্বালানিযুক্ত প্রবৃদ্ধির মডেল বিপরীতে যাওয়ার পরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। সাংহাইভিত্তিক উইন্ড ইনফরমেশন অনুসারে, বিলম্বিত অর্থ প্রদানসহ বছরে প্রায় ৯৯টি অভ্যন্তরীণ ঋণের খেলাপি ঘটেছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, জুলাই মাসে চীনের ফ্যাক্টরি-গেট মূল্যস্ফীতি গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। এনবিএসের বরাতে চায়না ডেইলি জানিয়েছে, দেশটির উৎপাদক মূল্য সূচক, যা কারখানা-গেটের মূল্য পরিমাপ করে সেটা গতবারের তুলনায় জুলাই মাসে ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ৬.১ শতাংশ।
এর আগে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রযুক্তি কেন্দ্র শহর শেনজেন পরিদর্শন করেছিলেন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ‘জরুরি’ আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু আবাসন খাত একটি অনন্য চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছে বলে রিপোর্ট করেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের এশীয় বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধি ডাইসুকে।
রিয়েল এস্টেট চীনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চালিত করে। প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবারের সম্পদের পেছনে আবাসন খাতের ভূমিকা রয়েছে। যা এটিকে বেশিরভাগ চীনা লোকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করে তুলেছে।
২০২০ সালে দেশটির আবাসন খাতে উদ্বেগ দেখা দেয়। সে সময় প্রায়শই বাড়ির মালিকরা ডেভেলপারদের কাছ থেকে অ্যাপার্টমেন্টগুলো কিনতেন তৈরি করার আগেই। চীন ডেভেলপারদের অত্যধিক ঋণের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু করে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদক্ষেপটি অনেক সংস্থার জন্য সংকট তৈরি করেছে, যারা নির্মাণ প্রকল্পগুলোকে চালু রাখতে ঋণের সহজ প্রবেশগম্যতার ওপর নির্ভর করেছিল। আর্থিক চাপ আরও গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বড় ডেভেলপার খেলাপিতে পরিণত হন। তার প্রভাব পড়ে পুরো শিল্পজুড়ে।
প্রেসিডেন্ট শির জিরো-কোভিড নীতি ভয়ঙ্করভাবে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ নতুন অঞ্চলগুলো করোনভাইরাস সংক্রমণের আওতায় এসেছে; বিশেষ করে তিব্বত এবং হাইনানের পর্যটন কেন্দ্র। নিষেধাজ্ঞা এবং আকস্মিকভাবে লকডাউনের কারণে কয়েক হাজার পর্যটক চীনে আটকা পড়েছে।
পুরানো সংক্রামিত অঞ্চলগুলো হটস্পট হিসেবে থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ চীনের নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও জীবিকার ক্ষতি এবং বিশাল মানসিক হয়রানির কারণে জিরো-কোভিড নীতি কাজ করেনি। এশিয়ান লাইট ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ চীনের নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষকে অসহায় করে তুলছে। সূত্র : এএনআই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন